পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম পরিচ্ছেদ ক্ষম সন্ধ্যাকালে খরস্রোত প্রশস্ত বিপাশাতীরে সহকারবৃক্ষতলে উপবেশন করিয়া এক ক্লনিন্দাসুন্দরী যুবতী একমনে চন্দ্রালোকে বিপাশাবক্ষে তরঙ্গভঙ্গ দেখিতেছিলেন। তাহার পাশ্বে একজন কৃষ্ণবর্ণ খৰ্ব্বাকার বুদ্ধ তাঙ্গর মুখের দিকে চাহিয়া বারবার দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিতেছিল। বিপাশার পূৰ্ব্ব তীরে ক্ষুদ্র গণ্ডগ্রামে ধ্বংসাবশেষমধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অগ্নিকুণ্ড প্রজালিত হইয়াছিল, নৈশ-অন্ধকার ভেদ করিয়া বহু মানবের কণ্ঠস্বর নীরব বিপাশা-তাঁর কম্পিত করিয়া তুলিতেছিল । সহকারবৃক্ষের অনতিদূরে প্রাচীন অশ্বথমূলে চারিজন সশস্ত্র বিদেশীয় সৈনিক বিশ্রাম করিতেছিল। বিপাশাগর্ভে সৈকতে শত শত হস্ত ব্যবধানে সশস্ত্র সৈনিকগণ দাড়াইয়াছিল, দর হইতে মনে হইতেছিল নদীতীরে বিস্তৃত স্কন্ধাবার স্থাপিত হইয়াছে। বহুক্ষণ নীরব থাকিয়া বৃদ্ধ অবশেষে তরুণীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, এখনও কি বুঝিতে পার নাই ?” তরুণী হাসিয়া কহিল, “কিছু না।” “ভানুকে একবার মনে পড়িল না ?” “এক ভানু ” “মা, গৌড়ের প্রাসাদ, উপনগরের উষ্ঠান, ভানুর হৃদয়ভরা ভালবাসা, সমস্তই কি ভুলিয়া গিয়াছ ?” “বাবা, তুমি কি বলিতেছ? আমি ত এ সকল কথা কখন শুনি নাই ?” “মধুসূদন এ কি করিলে ? বিপদের দিনে দরিদ্রের কাতর ক্ৰন্দনে কর্ণপাত করিয়াছিলে, বিপত্রাণ করিয়া আবার কোন বৈষ্ণবীমায়ায় আচ্ছন্ন করিলে ? নারায়ণ বল দাও, উদ্ধার কর । মন দুৰ্ব্বল, হৃদয় দুৰ্ব্বল, দেহ ক্ষণভঙ্গুর। বামুদেব, দীননাথ, আৰ্ত্তত্রাণ কর।”