পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায়। ১৭ ক্ষেত্রকে যে গৌরবান্বিত আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, আজও পৰ্য্যম্ভ কলির এই পূর্ণ রাজত্বে, তাহ সমানভাবেই বর্তমান। আজও ভক্ত হিন্দুনর-নারী, জগতের এই মাতৃরূপিণী কালিকা-মন্দিরে প্রবেশ করিয়া মাতৃমূৰ্ত্তি দেখিতে পাইলে, ভক্তি ভরে—“মা ! ম৷ ” বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠে । আজও এই অধৰ্ম্ম—অনাচারের দিনে, অৰ্দ্ধনাস্তিকতার আমলে, জড়বাদ ও পাশ্চাত্য-দর্শনের পূর্ণ আধিপত্য কালে, অনেক উচ্চ-শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব-স্বরূপ বাঙ্গালী, মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করিয়া ভক্তি পুলকিত স্বরে, তাহাকে “মা মা” বলিয়া ডাকিয়া, প্রাণের শান্তিলাভ করেন। সুদূর বঙ্গের চারিদিক হইতে, কেবল বঙ্গদেশ কেন—সমগ্র ভারতের মুদূর স্থান সমূহ হইতে, গৃহী-ভক্ত, সপরিবারে এই কালীক্ষেত্রে আসিতে পারিলে আপনাকে ধন্য জ্ঞান করেন। বিশ্ব-মাতার মন্দিরে না আসে কে ? রেল পথের বিস্তার জন্ত—দ্রাবিড়, কর্ণাট, ত্রৈলিঙ্গ, উৎকল, মগধ, অযোধ্যা, ইন্দ্রপ্রস্থ, বম্বে, মাঙ্গাজ, প্রভৃতি সকল স্থানের যাত্রীই—এই মাতৃমন্দিরে পূজা, হোম ও বন্দনার জন্য উপনীত হন। যতি, সন্ন্যাসী, দণ্ডাভ্ৰমী, সাধু, সাধক, যাহারা শক্তিমন্ত্রের উপাসক ও শাক্তধর্শ্বের অনুসারী তাহারাই চতুৰ্ব্বৰ্গ ফললাভের জন্য, প্রতি পুণ্যদিনে এইস্থানে উপস্থিত হইয়া থাকেন। পৌরাণিক যুগের কথা ছাড়িয়া দিয়া, প্রথমে আমাদের দেখিতে হইবে, কিরূপে দূরবগম্য জঙ্গলপূর্ণ প্রদেশ হইতে, এই পীঠস্থান পরিস্ফুট ইয়। ধীরে ধীরে মানবচক্ষে আত্মগৌরব প্রকটিত করিল। কিরূপে, কোন সময়ে, কাহার দ্বারা, প্রথম মন্দির নিৰ্ম্মিত হইল--কিরূপে জঙ্গলময় কালীক্ষেত্ৰ বৰ্ত্তমান অবস্থায় উপনীত হইল। এই সমস্ত অন্ধ-তমসাবৃত কালের প্রকৃত ইতিহাস অনুসন্ধান করা, বড়ই দুর্ঘট ব্যাপার। আমরা কালীঘাটের প্রথম আবির্ভাব সময়ের সম্বন্ধে এইস্থলে যাহা কিছু বলিব, তাহার অধিকাংশই কিম্বদন্তী-মূলক। সকল কিম্বদন্তীই যে অসার ও ভিত্তিশূন্ত, তাহাও বলিতে পারি না। তবে কালগর্ভে বিলয়প্রাপ্ত, অতীত যুগের ইতিহাসগুলি এত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রক্ষিত বা একাধারে বিলুপ্ত, যে তাহাদের সহায়তায় কোন ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায় না। আমরা ইতিপূৰ্ব্বে কলিকাতার ভূতত্ত্ব আলোচনা কালে দেখাইয়াছি, যে নিম্ন-বঙ্গ কখনও বা সমুদ্রগর্তে নিমজ্জিত হইয়াছে, আবার কখনও নদীবাহিত বালু রাশি পুঞ্জীভূত্ব হওয়ায়, সেই সুগভীর স্থান পূর্ণ হইয়া ভীষণ জঙ্গলে পরিণত হইয়াছে। কলিকাতা ও তাছার পার্শ্ববর্তী ভূভাগ সমূহের রসাতল-প্রবেশ