পাতা:কাদম্বরী (চতুর্থ সংস্করণ).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের পরিচয় ও ইংরাজী সাহিত্যে অসাধারণ পণ্ডিত হইলে কি হয়, অপূৰ্ব্ব কৃতিত্বের সহিত মাতৃভাষার সেবায় আজীবন আত্মনিয়োগ করিলে কি হয়, তিনি যে সংস্কৃত কলেজের একজন অখ্যাতনামা সামান্ত লাইব্রেরিয়ান —যে কলেজের দণ্ডমুণ্ডের কৰ্ত্ত স্বয়ং বিদ্যাসাগর। তাই বিদ্যাসাগরের আওতায় তারাশঙ্কর শুকাইয়া, মুশড়াইয়া, নিৰ্জ্জীব—মৃতকল্প হইয়া পড়িয়ছিলেন। তৈলসিক্ত শিরে তৈল দান করাই মানুষের চিরন্তন ধৰ্ম্ম। এ ক্ষেত্রেও সেই চিরন্তন, সনাতন, সদাতন প্রথা পূরামাত্রায় অনুষ্ঠিত করিতে আবালবৃদ্ধযুবা কেহই অণুমাত্র কার্পণ্য প্রদর্শন করেন নাই। সকলেই কেবল অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া বলিয়াছেন,—“ঐ দেখ পূৰ্ণচন্দ্র উদয় হইয়াছেন। কিন্তু অদূরে যে একটি ক্ষুদ্র ধ্রুবতারা অব্যাহতভাবে মৃদুমন্দ কিরণ বিকীর্ণ করিয়া আপন হাসিতে ভাসিতেছে, গগনের উত্তরপ্রান্তে অপূৰ্ব্ব শোভা বিকসিত করিতেছে—সে দিকে কাহারও নজর নাই! কিন্তু এ কথা ভুলিলে চলিবে না যে, চন্দ্রের হ্রাস আছে, বৃদ্ধি আছে, অস্ত আছে, উদয় আছে, কলঙ্ক আছে, রাহু আছে, কিন্তু ধ্রুবতারা চিরকালই আচল, আটল, অনড়—ধীর, স্থির, নিৰ্ম্মল। রাজনারায়ণ বসু হইতে আরম্ভ করিয়া আধুনিক সাহিত্যিকগণ পৰ্য্যন্ত যত লোকে বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাস-বিষয়ে আলোচনা করিয়াছেন, আমার পিতামহ ভিন্ন তঁহাদের মধ্যে অন্য কেহই তারাশঙ্করের বিষয়ে কিছুই বলেন নাই ; আজ পর্য্যন্ত কোথাও তাহার সংক্ষিপ্ত জীবনী পর্য্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই, তাই এই অবহেলিত ও উপেক্ষিত মনীষীর জন্য দুঃখ হয়, তাহার গ্রহবৈগুণ্য লক্ষ্য করিয়া নয়ন অশ্রুসজল হইয়া উঠে !