পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গলার গীতিকবিতা ԳS দণ্ড তাহদের এই জ্বলন্ত জীবন্ত অগ্নিশিখা নিভাইতে পারে নাই । আত্মার সেই প্ৰেমরসের অনন্ত বিভুতি, এই পরাধীনতার ভিতর হইতেই র্তাহারা অর্জন করিরা ছিলেন। প্রেমের সৌরাজ্যে র্তাহারা চিরনূতন সম্রাটু ; কেমন করিয়া অচিন্ত্য দ্বৈতাদ্বৈতের জীবন্ত প্ৰেমভরা মণিকোঠায় পৌছিয়া, সেই রাসচিন্তামণি আত্মার সাক্ষাৎকার লাভ করিয়া, সেই সাযুজ্য-পরিচয় পাইয়াছিলেন, তাহাই আমাদের জানিবার-উপলব্ধি করিবার বিষয় । কেহ কেহ বলেন, বৈষ্ণব পদাবলী-সাহিত্য “রূপক” । মানুষের নিজের অর্থাৎ বৈষ্ণবকবিগণের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও সত্যের উপরে নাকি তাহার প্রতিষ্ঠা নহে। রূপ- অরূপের প্রভেদ, সত্য-মিথ্যার প্ৰভেদ, বস্তু ও অবস্তুর প্রভেদ শুধু বিচারদ্বারা কতদূর বুঝা যায়, বলিতে পারি না । শুধু বিচার বুদ্ধির উপরে আমার সেরূপ আস্থা নাই। খুব সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধির সাহায্যে কল্পিত সত্য মিথ্যা সৃষ্টি করিয়া, সেই সত্যমিথ্যার সাগরসঙ্গমে দাড়াইলে গঙ্গাও দেখিতে পা "য়া যায় না, সাগরও দেখিতে পাওয়া যায় না। মায়া বলিয়া এই জাগ্ৰত বিশ্বের বিচিত্ৰতার মধ্যে মায়াধীশকে খাড়া করিয়া, সকল বিশ্বকে বুদ্ধিত্ব প্ৰাখিৰ্য্যের দ্বারা ফুৎকারে উড়াইয়া দেওয়া যাইতে পারে, কিন্তু তাহাতে বিশ্ব উড়িয়া যায় না, মায়াও আপনার প্রকৃতরূপে দেখা দেয় না। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, তাহাকে কল্পনা করিয়া লইয়া ও ইউরোপীয় সাহিত্যের অভিজ্ঞতাকে সেই কল্পনার সাহায্যে আপনার অভিজ্ঞতা মনে করিয়া লইয়া, সেই অভিজ্ঞতা দিয়া বৈষ্ণব সাহিত্য ও বৈষ্ণবকবিতা বুঝিতে গেলে বোধ হয়, রূপকের আবশ্যক হয়। কিন্তু বৈষ্ণব কবিদিগের সে সাধনা প্ৰকৃতপক্ষে বাঙ্গালীর সাধনা। বৈষ্ণবকবিদিগের প্রত্যেক অনুভূতি যে “তঁহাদের হৃদয় ও প্ৰাণের পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতার উপরেই স্বাধিষ্ঠিত।