পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছয়

 ডলি খুব সহজেই আমার বশ হয়ে গেলো। তার এক ফোঁটা ছোট্ট জীবনে সেই ভীষণ কড়াকড়ি দিয়ে ছকা ডিসিপ্লিনের মধ্যে কিছুই কারুর কাছ থেকে সে এ পর্য্যন্ত ভাল জিনিষ পায়নি তো, স্বাধীন সত্তা ওর মধ্যে জন্মাবে কি করে। মা ওর মুখের দিকে চোখ তুলে চাইতে পারেন না, খোকার শোকের আঘাত ও ভবিষ্যতের আতঙ্কে এই ছাল-ছাড়ানো পাখীর ছানার মতন মেয়েটাকে তিনি ঠিক সইতেই পারছেন না, তা’ ওকে দেখবেন কি করে! সে যত্ন অজস্রই পায়, আদর মোটেই পায় না। মিসেস পাকড়াসী সেবাটা খুবই চুটিয়ে করেন, কিন্তু করলে কি হবে, ঐ রকম নীরস গাম্ভীর্য্যে ভরা নীরস মুখের বিরূপ যত্ন-আত্তির অর্থ বোধ করা কচি-বাচ্চার পক্ষে সহজসাধ্য নয়।

 আমি ক্রমশঃই তাকে জালে ফেলে কাছে টানতে লাগলেম। হপ্তা খানেকের মধ্যে সে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করেই যেন আমার সঙ্গে গাইতে আরম্ভ করলে, “ভাঙলে আদল”—কখনও আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে—“আদুন দালা, আদুন দালা,”—

 আমি তার সমস্ত রুটিন ভেঙ্গে যখন তখন তাকে নিয়ে বাইরে চলে আসতে লাগলেম। বাগানেও ক্রমশঃ তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে আরম্ভ করে দিলেম। প্রথম দিনটায় আমার এই কাণ্ডে ইলা দেবী তো বিবর্ণ পাংশু হয়ে গেলেন। মনে হল এক্ষুণি, ছুটে এসেই আমার হাত থেকে ছিনিয়ে বুঝি মেয়েকে টেনেই নেবেন, কিন্তু বেশ স্পষ্ট দেখতে পেলেম, তা না করে প্রাণপণে আত্মসম্বরণ করছেন। এমন কি, পাছে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে ফেলেন,— সেই ভয়ে একটুক্ষণ স্তব্ধ থেকে হঠাৎ ‘আসছি’ বলে বাড়ীর মধ্যে পালিয়ে গেলেন!