পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯
সর্ব্বকালের হাওয়া

রাধাঠাকুরাণীর কাছে দৈব-মাদুলী ভিক্ষা করিয়া স’ পাঁচ আনা পয়সা বধূর মস্তকে ছোঁয়াইয়া রাখিয়া সেই মাদুলী তাহাকে পরাইয়া দিয়া উৎকণ্ঠিত চিত্তে প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। তথাপি হা-পুত্রের ঘরে পুত্র আসিল মা।

 প্রথম সন্তানের জন্য গ্রামান্তরের অত বড় জাগ্রত যে ‘বাবাঠাকুর’ তাহাকে পুত্রদান দিয়েছেন, তাঁর আশ্রয় লওয়া সম্ভবপর ছিল না। তাঁহার কার্য্যবিভাগ শুধু মৃতবৎসাদেরই জন্য। জয়দুর্গা শাশুড়ীর নিদারুণ মনকষ্টের প্রতি তিলেক ভ্রূক্ষেপ মাত্র না করিয়াই যথাপূর্ব্ব হাসিয়া খেলিয়া স্বামীর সহিত ঝগড়া ও ভাব করিয়া, শাশুড়ীর প্রতি ঝঙ্কার ঝাড়িয়া দিনের পর দিন বাড়িয়াই যাইতে লাগিল। আদুরে সেও বড় কম হয় নাই, বাপের বাড়ীতে শাসন সহবৎ সে অল্পই শিখিয়াছে। প্রথম দিকে একমাত্র ছেলের বউ বলিয়া শাশুড়ীও বড় অল্প প্রশ্রয় দেয় নাই। পাড়ার পাঁচটা মেয়ে জড়ো করিয়া অষ্টাকষ্টে, কড়িখেলা, জল ডেঙ্গাডেঙ্গি, খোন্তাখুনি প্রভৃতি খেলা ও হুড় করিয়াই সে কাটাইত। কিন্তু এমন করিয়া বেশী দিন গেল না। এইবার থাকো তার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া বিদ্রোহী হইয়া উঠিল, রুখিয়া বলিল, “খেয়ে খেয়ে হাতি হচ্চ; ছেলেপিলে হবে কোত্থেকে? পরাণের আমি আবার বিয়ে দেব।”

 প্রথমে রাখিয়া ঢাকিয়া, শেষে সর্ব্বসাক্ষাতেই এই রটনা চলিতে লাগিল। বউয়ের মুখের উপরেও অবশেষে অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় একদিন শাশুড়ী প্রচার করিয়া দিল, “আর তিনটে মাস আমি দেখবো। তারপর আর আমায় কেউ আটকাতে পারবে না। তিলু কৈবর্ত্তের ঝিয়ের সঙ্গে কথা আমি কয়েই রেখেছি।”

 আশপাশ হইতে যে সব কথা কানে আসিতেছিল, মুখোমুখি হইবামাত্র জয়দুর্গা তেলে-পড়া বেগুনের মত ছ্যাঁক্ করিয়া উঠিল,