পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২O গল্পগুচ্ছ দস্যরা আসিয়া দস্যপতিকে সংবাদ দিল, “মহারাজ, বহৎ শিকার মিলিয়াছে। মাথায় মুকুট, রাজবেশ, কটিদেশে তরবারি।" দস্যপতি কহিলেন, "তবে এ শিকার আমার। তোরা এখানেই থাক।” পথিক চলিতে চলিতে সহসা একবার শাক পত্রের খসখস শব্দ শুনিতে পাইল। উৎকণ্ঠিত হইয়া চারি দিকে চাহিয়া দেখিল । সহসা বকের মাঝখানে তাঁর আসিয়া বিধিল, পান্থ 'মা' বলিয়া ভূতলে পড়িয়া গেল । দস্যপতি নিকটে আসিয়া জানা পাতিয়া নত হইয়া আহতের মুখের দিক নিরীক্ষণ করিলেন। ভূতলশায়ী পথিক দস্যর হাত ধরিয়া কেবল একবার মদ বরে কহিল, “ললিত!” মহেনতে দসার হদয় যেন সহস্র খণ্ডে ভাঙিয়া এক চীৎকারশব্দ বাহির হইল, “রাজকুমারী!” দস্যরা আসিয়া দেখিল, শিকার এবং শিকারী উভয়েই অন্তিম আলিঙ্গনে বন্ধ হইয়া মত পড়িয়া আছে। রাজকুমারী একদিন সন্ধ্যাকালে তাঁহার অন্তঃপুরের উদ্যানে অজ্ঞানে ললিতের উপর রাজদণ্ড নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, ললিত আর-একদিন সন্ধ্যাকালে অরণের মধ্যে অজ্ঞানে রাজকন্যার প্রতি শর নিক্ষেপ করিল। সংসারের বাহিরে যদি কোথাও মিলন হইয়া থাকে তো আজ উভয়ের অপরাধ উভয়ে বোধ করি মজিনা করিয়াছে। ভাদ্র-আশ্বিন ১২৯৯