পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> 9ミ গল্পগুচ্ছ করিয়াছি; কারণ, যথার্থ ভালো জিনিসকে যেমন বিদ্ৰুপ করিবার সুবিধা এমন উপহাস্য বিষয়কে নহে। হনবংশীয়েরা মন বংশীয়দের যেমন সহজে বিদ্রুপ করিতে পারে মন বংশীয়েরা হন বংশীয়দিগকে বিদ্রুপ করিয়া কখনো তেমন কৃতকায হইতে পারে না। সতরাং সরচিকে তাহারা দন্তোন্মীলন করিয়া দেশছাড়া করিল। আমার প্রভু আমার প্রতি আর তেমন সমাদর করেন না। সভাস্থলেও আমার কোনো সম্মান নাই। পথে বাহির হইলে লোকে গায়ে পড়িয়া আলাপ করিতে আসে না। এমনকি আমাকে দেখিয়া কেহ কেহ হাসিতে আরম্ভ করিয়াছে। ইতিমধ্যে আমার প্রহসনগলার কথাও লোকে সম্পণে ভুলিয়া গিয়াছে। হঠাৎ বোধ হইল, আমি যেন একটা দেশালায়ের কাঠি; মিনিটখানেক জৰলিয়া একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়িয়া গিয়াছি। মন এমনি নিরুৎসাহ হইয়া গেল, মাথা খড়িয়া মরিলে এক লাইন লেখা বাহির হয় না। মনে হইতে লাগিল, বাঁচিয়া কোনো সুখ নাই। প্রভা আমাকে এখন ভয় করে। বিনা আহবানে সহসা কাছে আসিতে সাহস করে না। সে বুঝিতে পারিয়াছে, মজার কথা লিখিতে পারে এমন বাবার চেয়ে মাটির পর্তুল ঢের ভালো সঙ্গী। একদিন দেখা গেল আমাদের আহিরগ্রামপ্রকাশ জমিদারকে ছাড়িয়া আমাকে লইয়া পড়িয়াছে। গোটাকতক অত্যন্ত কুৎসিত কথা লিখিয়াছে। আমার পরিচিত বন্ধবোন্ধবেরা একে একে সকলেই সেই কাগজখানা লইয়া হাসিতে হাসিতে আমাকে আছে। অর্থাৎ, গালি যে দিয়াছে তাহা ভাষা দেখিলেই পরিকার বুঝা যায়। সমস্ত দিন ধরিয়া বিশজনের কাছে ওই এক কথা শুনিলাম। আমার বাসার সম্মুখে একটা বাগানের মতো ছিল । সন্ধ্যাবেলায় নিতান্ত পীড়িতচিত্তে সেইখানে একাকী বেড়াইতেছিলাম। পাখিরা নীড়ে ফিরিয়া আসিয়া যখন কলরব বন্ধ করিয়া সবচ্ছন্দে সন্ধ্যার শান্তির মধ্যে আত্মসমপণ করিল তখন বেশ বুঝিতে পারিলাম পাখিদের মধ্যে রসিক লেখকের দল নাই, এবং সরোচি লইয়া তক হয় না । মনের মধ্যে কেবলই ভাবিতেছি কী উত্তর দেওয়া যায়। ভদ্র তার একটা বিশেষ অসুবিধা এই যে, সকল পথানের লোকে তাহাকে বুঝিতে পারে না। অভদ্রতার ভাষা অপেক্ষাকৃত পরিচিত, তাই ভাবিতেছিলাম সেই রকম ভাবের একটা মাখের মতো জবাব লিখিতে হইবে। কিছুতেই হার মানিতে পারিব না। এমন সময়ে সেই সন্ধ্যার অন্ধকারে একটি পরিচিত ক্ষুদ্র কণ্ঠের স্বর শনিতে পাইলাম এবং তাহার পরেই আমার করতলে একটি কোমল উষ্ণ পশা অনুভব করিলাম। এত উদবেজিত অন্যমনস্ক ছিলাম যে, সেই মহেতে সেই সবর ও সেই পশ’ জানিয়াও জানিতে পারলাম না। কিন্তু এক মহত পরেই সেই সবর ধীরে ধীরে আমার কগে জাগ্ৰত, সেই সাধাপশ আমার করতলে সঞ্জীবিত হইয়া উঠিল। বালিকা একবার আস্তে আস্তে কাছে আসিয়া মদবেরে ডাকিয়াছিল, “বাবা।” কোনো উত্তর না পাইয়া আমার দক্ষিণ হসন্ত তুলিয়া ধরিয়া একবার আপনার কোমল কপোলে বলাইয়া আবার ধীরে ধীরে গহে ফিরিয়া যাইতেছে।