পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミb8 গল্পগুচ্ছ আর থাকিতে পারিল না। এই স্বেচ্ছাচারী ক্ষুদ্র অত্যাচারীর নিকটে সম্পণেরপে আত্মসমপণ করিয়া দিল। ছেলেটির মা ছিল না বলিয়া, তাহার প্রতি তাহার আধিপত্য ঢের বেশি হইল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ছেলেটির নাম হইল নীলমণি। তাহার বয়স যখন দুই বৎসর তখন তাহার পিতার কঠিন পীড়া হইল। অতি শীঘ্ৰ চলিয়া আসিবার জন্য জয়গোপালের নিকট পত্র গেল। জয়গোপাল যখন বহন চেষ্টায় ছটি লইয়া আসিয়া পৌছিল তখন কালীপ্রসনের মৃত্যুকাল উপস্থিত। মৃত্যুর পবে কালীপ্রসন্ন নাবালক ছেলেটির তত্ত্বাবধানের ভার জয়গোপালের প্রভি অপণ করিয়া তাঁহার বিষয়ের সিকি অংশ কন্যার নামে লিখিয়া দিলেন। সতরাং বিষয়রক্ষার জন্য জয়গোপালকে কাজ ছাড়িষা দিয়া চলিয়া আসিতে হইল । অনেক দিনের পরে স্বামী-স্ত্রীর পনমিলন হইল। একটা জড়পদার্থ ভাঙিয়া গেলে আবার ঠিক তাহার খাঁজে খাঁজে মিলাইয়া দেওয়া যায়, কিন্তু দুটি মানুষকে যেখানে বিচ্ছিন্ন করা হয় দীঘ বিচ্ছেদের পর আর ঠিক সেখানে রেখায় রেখায় মেলে না। কারণ, মন জিনিসটা সজীব পদার্থ, নিমেষে নিমেষে তাহার পরিণতি এবং পরিবতন । শশীর পক্ষে এই নতন মিলনে নতন ভাবের সঞ্চার হইল। সে যেন তাহার স্বামীকে ফিরিয়া বিবাহ করিল। পুরাতন দাপত্যের মধ্যে চিরাভ্যাসবশত যে-এক অসাড়তা জন্মিয়া গিয়াছিল, বিরহের আকর্ষণে তাহা অপসত হইয়া সে তাহার স্বামীকে যেন পবোপেক্ষা সম্পন্ণতর ভাবে প্রাপ্ত হইল; মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল, “যেমন দিনই আসকে, যত দিনই যাক, স্বামীর প্রতি এই দীপ্ত প্রেমের উন্জলতাকে কখনোই লান হইতে দিব না।” নতন মিলনে জয়গোপালের মনের অবস্থাটা অন্যর প। পবে যখন উভয়ে অবিচ্ছেদে একত্র ছিল, যখন সতীর সহিত তাহার সমস্ত সবার্থের এবং বিচিত্র অভ্যাসের ঐক্যবন্ধন ছিল, সত্ৰী তখন জীবনের একটি নিত্যসত্য হইয়াছিল— তাহাকে বাদ দিতে গেলে দৈনিক অভ্যাসজালের মধ্যে সহসা অনেকখানি ফাঁক পড়িত। এইজন্য বিদেশে গিয়া জয়গোপাল প্রথম-প্রথম অগাধ জলের মধ্যে পড়িয়াছিল। কিন্তু ক্ৰমে তাহার সেই অভ্যাসবিচ্ছেদের মধ্যে নতন অভ্যাসের তালি লাগিয়া গেল। কেবল তাহাই নহে। পবে নিতান্ত নিশ্চেন্ট নিশ্চিত ভাবে তাহার দিন কাটিয়া যাইত। মাঝে দই বৎসর অবস্থা-উন্নতি-চেষ্টা তাহার মনে এমন প্রবলভাবে জাগিয়া উঠিয়াছিল যে, তাহার মনের সম্মখে আর কিছই ছিল না। এই নতন নেশার তীব্রতার তুলনায় তাহার পবেজীবন বস্তুহীন ছায়ার মতো দেখাইতে লাগিল। সীলোকের প্রকৃতিতে প্রধান পরিবতন ঘটার প্রেম, এবং পরষের ঘটায় দশ্চেষ্টা। জয়গোপাল দই বৎসর পরে আসিয়া অবিকল তাহার পব সীটিকে ফিরিয়া পাইল না। তাহার প্রীর জীবনে শিশু শ্যালকটি একটা নতন পরিসর বন্ধি করিয়াছে।