পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষ্টনীড় । । 8 학 জন্য ভূপতি প্রস্তুত হইতেছিল। এমনসময় অমল ঝড়ের মতো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। ভূপতি নিজের অগাধ চিন্তার মধ্য হইতে হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া চাহিল। কহিল, “খবর কী অমল।” অকস্মাৎ মনে হইল, অমল বুঝি আর-একটা কী গরতের দুঃসংবাদ লইয়া আসিল। অমল কহিল, "দাদা, আমার উপরে তোমার কি কোনোরকম সন্দেহের কারণ হয়েছে।” ভূপতি আশ্চর্য হইয়া কহিল, “তোমার উপরে সন্দেহ!” মনে-মনে ভাবিল, “সংসার ষেরপ দেখিতেছি তাহাতে কোনদিন অমলকেও সন্দেহ করিব আশ্চব নাই।” অমল। বোঠান কি আমার চরিত্র সম্প্রবন্ধে তোমার কাছে কোনোরকম দোষারোপ করেছেন । ভূপতি ভাবিল, ওঃ এই ব্যাপার। বাঁচা গেল। স্নেহের অভিমান। সে মনে করিয়াছিল, সবনাশের উপর বুঝি আর-একটা কিছু সবনাশ ঘটিয়াছে। কিন্তু গরতের সংকটের সময়েও এই-সকল তুচ্ছ বিষয়ে কৰ্ণপাত করিতে হয়। সংসার এ দিকে সাঁকোও নাড়াইবে অথচ সেই সাঁকোর উপর দিয়া তাহার শাকের অাঁটগুলো পার করিবার জন্য তাগিদ করিতেও ছাড়িবে না । অন্য সময় হইলে ভূপতি অমলকে পরিহাস করিত, কিন্তু আজ তাহার সে প্রফুল্লতা ছিল না। সে বলিল, “পাগল হয়েছ নাকি।” অমল আবার জিজ্ঞাসা করিল, “বোঠন কিছর বলেন নি ?” ভূপতি। তোমাকে ভালোবাসেন বলে যদি কিছু বলে থাকেন তাতে রাগ করবার কোনো কারণ নেই। অমল । কাজকমের চেষ্টায় এখন আমার অন্যত্র যাওয়া উচিত । ভূপতি ধমক দিয়া কহিল, "অমল, তুমি কী ছেলেমানষি করছ তার ঠিক নেই। এখন পড়াশুনো করো, কাজকম পরে হবে ।” অমল বিমষ মুখে চলিয়া আসিল, ভূপতি তাহার কাগজের গ্রাহকদের মলাপ্রাপ্তির তালিকার সহিত তিন বৎসরের জমাখরচের হিসাব মিলাইতে বসিয়া গেল। দশম পরিচ্ছেদ অমল পিথর করিল, বউঠানের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে হইবে, এ কথাটার শেষ না করিয়া ছাড়া হইবে না। বৌঠানকে যে-সকল শক্ত শক্ত কথা শনাইবে মনে-মনে তাহা আবৃত্তি করিতে লাগিল । মন্দা চলিয়া গেলে চার সংকল্প করিল, অমলকে সে নিজে হইতে ডাকিয়া পাঠাইয়া তাহার রোষশান্তি করিবে। কিন্তু একটা লেখার উপলক্ষ করিয়া ডাকিতে হইবে। অমলেরই একটা লেখার অনুকরণ করিয়া অমাবস্যার আলো’ নামে সে একটা প্রবন্ধ ফদিয়াছে। চায় এটুকু বাকিয়াছে যে, তাহার স্বাধীন ছাঁদের লেখা অমল পছন্দ করে না । পণিমা তাহার সমস্ত আলোক প্রকাশ করিয়া ফেলে বলিয়া চার তাহার নতন রচনায় পশিমাকে অত্যন্ত তৎসনা করিয়া লঙ্গা দিতেছে। লিখিতেছে— অমাবস্যার ○ >