পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8? খোকাবাবরে প্রত্যাবতন প্রথম পরিচ্ছেদ রাইচরণ যখন বাবদের বাড়ি প্রথম চাকরি করিতে আসে তখন তাহার বয়স বারো। যশোহর জিলায় বাড়ি। লবা চুল, বড়ো বড়ো চোখ, শ্যামচিক্কণ ছিপছিপে বালক । জাতিতে কায়স্থ। তাহার প্রভুরাও কায়স্থ। বাবদের এক-বৎসর-বয়স্ক একটি শিশরে রক্ষণ ও পালন -কাযে সহায়তা করা তাহার প্রধান কতব্য ছিল । সেই শিশুটি কালক্রমে রাইচরণের কক্ষ ছাড়িয়া স্কুলে, স্কুল ছাড়িয়া কলেজে, অবশেষে কলেজ ছাড়িয়া মন্সেফিতে প্রবেশ করিয়াছে। রাইচরণ এখনও তাঁহার ভূত্য । তাহার আর-একটি মনিব বাড়িয়াছে; মাঠাকুরানী ঘরে আসিয়াছেন; সুতরাং অনকেলবাবরে উপর রাইচরণের পুবে যতটা অধিকার ছিল তাহার অধিকাংশই নতন কত্রীর হস্তগত হইয়াছে। কিন্তু কত্রী যেমন রাইচরণের পবোধিকার কতকটা হ্রাস করিয়া লইয়াছেন তেমনি একটি নতন অধিকার দিয়া অনেকটা পরেণ করিয়া দিয়াছেন। অনকেলের একটি পত্রসন্তান অলপদিন হইল জন্মলাভ করিয়াছে— এবং রাইচরণ কেবল নিজের চেষ্টা ও অধ্যবসায়ে তাহাকে সম্পর্ণেরুপে আয়ত্ত করিয়া লইয়াছে। তাহাকে এমনি উৎসাহের সহিত দোলাইতে আরম্ভ করিয়াছে, এমনি নিপুণতার সহিত তাহাকে দুই হাতে ধরিয়া আকাশে উৎক্ষিপ্ত করে, তাহার মুখের কাছে আসিয়া এমনি সশব্দে শিরশচালন করিতে থাকে, উত্তরের কোনো প্রত্যাশা না করিয়া এমন-সকল সম্পণে অর্থহীন অসংগত প্রশন সরে করিয়া শিশর প্রতি প্রয়োগ করিতে থাকে যে, এই ক্ষুদ্র আনন্কৌলবটি রাইচরণকে দেখিলে একেবারে পলকিত হইয়া উঠে । অবশেষে ছেলেটি যখন হামাগুড়ি দিয়া অতি সাবধানে চৌকাঠ পার হইত এবং কেহ ধরিতে আসিলে খিলখিল হাস্যকলরব তুলিয়া দ্রুতবেগে নিরাপদ স্থানে লকাইতে চেষ্টা করিত, তখন রাইচরণ তাহার অসাধারণ চাতুষ ও বিচারশক্তি দেখিয়া চমৎকৃত হইয়া যাইত। মার কাছে গিয়া সগৰ সবিস্ময়ে বলিত, “মা, তোমার ছেলে বড়ো হলে জজ হলে, পাঁচ হাজার টাকা রোজগার করবে ।” পথিবীতে আর-কোনো মানবসন্তান যে এই বয়সে চৌকাঠ-লঙ্ঘন প্রভৃতি জজেদের পক্ষে কিছুই আশ্চর্য নহে। অবশেষে শিশু যখন টলমল করিয়া চলিতে আরম্ভ করিল সে এক আশ্চৰ ল্যাপার, এবং যখন মাকে মা, পিসিকে পিচি, এবং রাইচরণকে চন্ন বলিয়া সম্প্রভাষণ করিল, তখন রাইচরণ সেই প্রতায়াতীত সংবাদ যাহার-তাহার কাছে ঘোষণা করিতে ठलापाठन । সব চেয়ে আশ্চযে’র বিষয় এই যে, মাকে মা বলে, পিসিকে পিসি বলে, কিন্তু আমাকে বলে চন্ন। বাস্তবিক, শিশর মাথায় এ বধি কী করিয়া জোগাইল বলা শন্ত। নিশ্চয়ই কোনো বয়স্ক লোক কখনোই এরপে অলোকসামান্যতার পরিচয় দিত