পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も> げ গল্পগুচ্ছ আপনার রোগকান্ত হাতটি রাখিল । একবার নিশবাস ফেলিয়া, একটুখানি উসখসে করিয়া যতীন বলিল, “মাসি, মণি যদি জেগেই থাকে তা হলে একবার যদি তাকে—" “এখনি ডেকে দিচ্ছি, বাবা।” “আমি বেশি ক্ষণ তাকে এ ঘরে রাখতে চাই নে— কেবল পাঁচ মিনিট— দটো-একটা কথা যা বলবার আছে—* মাসি দীঘনিশ্বাস ফেলিয়া মণিকে ডাকিতে আসিলেন। এ দিকে যতীনের নাড়ী দ্রুত চলিতে লাগিল। যতীন জানে, আজ পর্যন্ত সে মণির সঙ্গে ভালো করিয়া কথা জমাইতে পারে নাই। দই যন্ত্র দুই সরে বাঁধা, এক সঙ্গে আলাপ চলা বড়ো কঠিন। মণি তাহার সঙ্গিনীদের সঙ্গে অনগ’ল বকিতেছে হাসিতেছে, দর হইতে তাহাই শুনিয়া যতীনের মন কতবার ঈষায় পীড়িত হইয়াছে। যতীন নিজেকেই দোষ দিয়াছে—সে কেন অমন সামান্য যাহা-তাহা লইয়া কথা কহিতে পারে না। পারে না যে তাহাও তো নহে, নিজের বন্ধবোন্ধবদের সঙ্গে যতীন সামান্য বিষয় লইযই কি আলাপ করে না। কিন্তু, পরষের যাহা-তাহা তো মেয়েদের যাহা-তাহার সঙ্গে ঠিক মেলে না। বড়ো কথা একলাই একটানা বলিয়া যাওয়া চলে, অন্য পক্ষ মন দিল কি না খেয়াল না করিলেই হয় ; কিন্তু তুচ্ছ কথায় নিয়ত দুই পক্ষের যোগ থাকা চাই। বাঁশি একাই বাজিতে পারে, কিন্তু দইয়ের মিল না থাকিলে করতালের খচমচ জমে না। এইজন্য কত সন্ধ্যাবেলায় যতীন মণির সঙ্গে যখন খোলা বারান্দায় মাদর পাতিয়া বসিয়াছে দুটো-চারটে টানাবোনা কথার পরেই কথার সত্ৰ একেবারে ছিাড়িয়া ফাঁক হইয়া গেছে : তাহার পরে সন্ধ্যার নীরবতা যেন লক্তায় মরিতে চাহিয়াছে। যতীন বঝিতে পারিয়াছে, মণি পালাইতে পারিলে বাঁচে ; মনে মনে কামনা করিয়াছে, এখনই কোনো-একজন তৃতীয় ব্যক্তি যেন আসিয়া পড়ে। কেননা, দুই জনে কথা কহা কঠিন, তিন জনে সহজ । মণি আসিলে আজ কেমন করিয়া কথা আরম্ভ করিবে যতীন তাহাই ভাবিতে লাগিল। ভাবিতে গেলে কথাগুলো কেমন অস্বাভাবিক-রকম বড়ো হইয়া পড়ে— সে-সব কথা চলিবে না। যতীনের আশঙ্কা হইতে লাগিল আজকের রাতের পাঁচ মিনিটও ব্যথ হইবে। অথচ, তাহার জীবনের এমনতরো নিরালা পাঁচ মিনিট আর কটাই বা বাকি আছে। “একি বউ, কোথাও যাচ্ছ নাকি।” “সীতারামপারে যাব।” “সে কী কথা । কার সঙ্গে যাবে।” “অনাথ নিয়ে যাচ্ছে - “লক্ষী মা আমার, তুমি যেয়ো, আমি তোমাকে বারণ করব না— কিন্তু আজ नग्न [*