পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরিচিতা ( ) రి ছটিয়া গিয়াছিল— এখনো যে তাহাকে কিছুতেই টানিয়া ফিরাইতে পারি না। দেয়ালটুকুর আড়ালে রহিয়া গেল গো। কপালে তার চন্দন অীকা, গায়ে তার লাল শাড়ি, মুখে তার লঙ্গার রক্তিমা, হৃদয়ের ভিতরে কী যে তা কেমন করিয়া বলিব । আমার কপলোকের কল্পলতাটি বসন্তের সমস্ত ফসলের ভার আমাকে নিবেদন করিয়া দিবার জন্য নত হইয়া পড়িয়াছিল। হাওয়া আসে, গন্ধ পাই, পাতার শব্দ শনি— কেবল আর একটিমাত্র পা ফেলার অপেক্ষা—এমন সময়ে সেই এক পদক্ষেপের দুরত্বটুকু এক মহেনতে অসীম হইয়া উঠিল! এতদিন যে প্রতি সন্ধ্যায় আমি বিনদাদার বাড়িতে গিয়া তাঁহাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছিলাম! বিনন্দার বণনার ভাষা অত্যন্ত সংকীর্ণ বলিয়াই তাঁর প্রত্যেক কথাটি স্ফলিঙ্গের মতো আমার মনের মাঝখানে আগন জনলিয়া দিয়াছিল। বঝিয়াছিলাম মেয়েটির রুপ বড়ো আশচষ ; কিন্তু না দেখিলাম তাহাকে চোখে, না দেখিলাম তার ছবি, সমস্তই অস্পষ্ট হইয়া রহিল। বাহিরে তো সে ধরা দিলই না, তাহাকে মনেও অানিতে পারিলাম না— এইজন্য মন সেদিনকার সেই বিবাহসভার দেয়ালটার বাহিরে ভূতের মতো দীঘনিশ্বাস ফেলিয়া বেড়াইতে লাগিল । হরিশের কাছে শুনিয়াছি, মেয়েটিকে আমার ফোটোগ্রাফ দেখানো হইয়াছিল। পছন্দ করিয়াছে বই-কি । না করিবার তো কোনো কারণ নাই। আমার মন বলে, সে ছবি তার কোনো-একটি বাক্সের মধ্যে লকোনো আছে। একলা ঘরে দরজা বন্ধ করিয়া এক-একদিন নিরালা দােপরেবেলায় সে কি সেটি খালিয়া দেখে না। যখন কংকিয়া পড়িয়া দেখে তখন ছবিটির উপরে কি তার মুখের দই ধার দিয়া এলোচুল আসিয়া পড়ে না। হঠাৎ বাহিরে কারও পায়ের শব্দ পাইলে সে কি তাড়াতাড়ি তার সগন্ধ অচিলের মধ্যে ছবিটিকে লুকাইয়া ফেলে না। দিন যায়। একটা বৎসর গেল। মামা তো লজ্জায় বিবাহসম্বন্ধের কথা তুলিতেই পারেন না। মার ইচ্ছা ছিল, আমার অপমানের কথা যখন সমাজের লোকে ভুলিয়া যাইবে তখন বিবাহের চেষ্টা দেখিবেন। এ দিকে আনি শুনিলাম সে মেয়ের নাকি ভালো পাত্র জটিয়াছিল, কিন্তু সে পণ করিয়াছে বিবাহ করিবে না। শনিয়া আমার মন পালকের আবেশে ভরিয়া গেল। আমি কল্পনায় দেখিতে লাগিলাম, সে ভালো করিয়া খায় না ; সন্ধ্যা হইয়া আসে, সে চুল বধিতে ভুলিয়া যায়। তার বাপ তার মুখের পানে চান আর ভাবেন, আমার মেয়ে দিনে দিনে এমন হইয়া যাইতেছে কেন। হঠাৎ কোনোদিন তার ঘরে আসিয়া দেখেন, মেয়ের দুই চক্ষ জলে ভরা। জিজ্ঞাসা করেন, মা, তোর কী হইয়াছে বল আমাকে। মেয়ে তাড়াতাড়ি চোখের জল মাছিয়া বলে, কই, কিছই তো হয় নি বাবা।” বাপের এক মেয়ে যে— বড়ো আদরের মেয়ে। যখন অনাবটির দিনে ফলের কুড়িটির মতো মেয়ে একেবারে বিমষ হইয়া পড়িয়াছে তখন বাপের প্রাণে আর সহিল না। তখন অভিমান ভাসাইয়া দিয়া তিনি ছটিয়া আসিলেন আমাদের বারে। তার পরে ? তার পরে মনের মধ্যে সেই যে কালো রঙের ধারাটা বহিতেছে সে বেন কালো সাপের মতো রপ ধরিয়া ফোঁস করিয়া উঠিল। সে বলিল, বেশ তো, আরএকবার বিবাহের আসর সাজানো হোক, আলো জলকে, দেশ-বিদেশের লোকের নিমন্ত্রণ হোক, তার পরে তুমি বরের টোপর পারে দলিয়া দলবল লইয়া সভা ছাড়িয়া