পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

q○ミ গল্পগুচ্ছ নিজেই নিতে রাজি আছি। আজকাল বিদ্যাশিক্ষার যে-সকল নতুন প্রণালী বেরিয়েছে তার কতক কতক ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। অনিলা হাঁও বললে না, নাও বললে না। এতদিন পরে আমার প্রথম সন্দেহ হল, অনিলা আমাকে শ্রদ্ধা করে না আমি কলেজে পাস করি নি, সেইজন্য সম্ভবত ও মনে করে, পড়াশুনো সম্ভবন্ধে পরামর্শ দেবার ক্ষমতা এবং অধিকার আমার নেই। এতদিন ওকে সৌজাত্য অভিব্যক্তিবাদ এবং রেডিয়ো-চাঞ্চল্য সম্বন্ধে যা-কিছ বলেছি নিশ্চয়ই অনিলা তার মুল্য কিছুই বোঝে নি। ও হয়তো মনে করেছে, সেকেণ্ড ক্লাসের ছেলেও এর চেয়ে বেশি জানে। কেননা, মাস্টারের হাতের কান-মলার প্যাঁচে প্যাঁচে বিদ্যেগুলো অটি হয়ে তাদের মনের ম:ে বসে গেছে। রাগ করে মনে মনে বললাম, মেয়েদের কাছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবার আশা সে যেন ছাড়ে বিদ্যাবধিই যার প্রধান সম্পদ । সংসারে অধিকাংশ বড়ো বড়ো জীবননাট্য যবনিকার আড়ালেই জমতে থাকে, পঞ্চমাঙ্কের শেষে সেই যবনিকা হঠাৎ উঠে যায়। আমি যখন আমার দ্বৈতদের নিয়ে বেগস’র তত্ত্বজ্ঞান ও ইবসেনের মনস্তত্ত্ব আলোচনা করছি তখন মনে করেছিলাম, অনিলার জীবনযজ্ঞবেদীতে কোনো আগনই বুঝি জলে নি। কিন্তু, আজকে যখন সেই অতীতের দিকে পিছন ফিরে দেখি তখন স্পষ্ট দেখতে পাই, যে সন্টিকতা আগনে পড়িয়ে, হাতুড়ি পিটিয়ে, জীবনের প্রতিমা তৈরি করে থাকেন, অনিলার মম স্থলে তিনি খুবই সজাগ ছিলেন । সেখানে একটি ছোটো ভাই, একটি দিদি এবং একটি বিমাতার সমাবেশে নিয়তই একটা ঘাতপ্রতিঘাতের লীলা চলছিল। পরাণের বাসুকি যে পৌরাণিক পথিবীকে ধরে আছে সে পৃথিবী সিথর। কিন্তু, সংসারে যে মেয়েকে বেদনার পথিবী বহন করতে হয় তার সে পৃথিবী মহতে মহেতো নতন নতন আঘাতে তৈরি হয়ে উঠছে । সেই চলতি ব্যথার ভার বকে নিয়ে যাকে ঘরকন্নার খ:টিনাটির মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন চলতে হয় তার অন্তরের কথা অন্তয"ামী ছাড়া কে সম্পণে বুঝবে। অন্তত, আমি তো কিছুই বুঝি নি। কত উদ্যবেগ, কত অপমানিত প্রয়াস, পীড়িত স্নেহের কত অন্তগঢ়ি ব্যাকুলতা, আমার এত কাছে নিঃশব্দতার অন্তরালে মথিত হয়ে উঠছিল আমি তা জানিই নি। আমি জ্ঞানতুম, যেদিন দ্বৈতদলের ভোজের বার উপস্থিত হত সেইদিনকার উদ্যোগপব’ই আনিলার জীবনের প্রধান পব । আজ বেশ বুঝতে পারছি, পরম ব্যথার ভিতর দিয়েই এ সংসারে এই ছোটো ভাইটিই দিদির সব-চেয়ে অন্তরতম হয়ে উঠেছিল । সরোজকে মানষে করে তোলা সম্বন্ধে আমার পরামর্শ ও সহায়তা এরা সম্পণে অনাবশ্যক বলে উপেক্ষা করাতে আমি ও দিকটাতে একেবারে তাকাই নি, তার যে কিরকম চলছে সে কথা zकाळनामिन छिखानाe कर्गव्र नि । ইতিমধ্যে আমাদের গলির পয়লা-নম্বর বাড়িতে লোক এল। এ বাড়িটি সেকালের বিখ্যাত ধনী মহাজন উদ্ধব বড়ালের আমলে তৈরি। তার পরে দই পরষের মধ্যে সে বংশের ধন জন প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছে, দুটি-একটি বিধবা বাকি আছে। তারা এখানে থাকে না, তাই বাড়িটা পোড়ো অবস্থাতেই আছে। মাঝে মাঝে বিবাহ প্রভৃতি ক্রিয়াকাণ্ডে এ বাড়ি কেউ কেউ অলপ দিনের জন্যে ভাড়া নিয়ে থাকে, বাকি সময়টা এত বড়ো বাড়ির ভাড়াটে প্রায় জোটে না। এবারে এলেন, মনে করো, তাঁর নাম রাজা সিতাংশ মৌলি, এবং ধরে নেওয়া যাক তিনি নরোত্তমপরের জমিদার।