পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্যাগ bf○ চতুথ পরিচ্ছেদ কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী । অন্ধকার রাত্রি। পাখি ডাকিতেছে না। পঙ্করিণীর ধারের লিচু গাছটি কালো চিত্রপটের উপর গাঢ়তর দাগের মতো লেপিয়া গেছে। কেবল দক্ষিণের বাতাস এই অন্ধকারে অন্ধভাবে ঘুরিয়া ঘরিয়া বেড়াইতেছে, যেন তাহাকে নিশিতে পাইয়াছে । আর, আকাশের তারা নিনিমেষ সতক নেয়ে প্রাণপণে অন্ধকার ভেদ করিয়া কী-একটা রহস্য আবিকার করিতে প্রবক্ত আছে। শয়নগহে দীপ জম্বালা নাই। হেমন্ত বাতায়নের কাছে থাটের উপরে বসিয়া সম্মুখের অন্ধকারের দিকে চাহিয়া আছে। কুসম ভূমিতলে দই হাতে তাহার পা জড়াহয়া পায়ের উপর মুখ রাখিয়া পড়িয়া আছে । সময় যেন স্তম্ভিত সমুদ্রের মতো স্থির হইয়া আছে । যেন অনন্ত নিশাঁথিনীর উপর অদষ্ট চিত্রকর এই একটি চিরস্থায়ী ছবি আকিয়া রাখিয়াছে— চারি দিকে প্রলয়, মাঝখানে একটি বিচারক এবং তাe iব পায়ের কাছে একটি অপরাধিনী । আবার চটিজতার শব্দ হইল । হরিহর মুখমেজ বারের কাছে আসিয়া বলিলেন, ” অনেকক্ষণ হইয়া গিয়াছে, আর সময় দিতে পারি না । মেয়েটকে ঘর হইতে দর করিয়া দাও।” কুসুম এই সবর শনিবামাত্র একবার মহেত্যের মতো চিরজীবনের সাধ মিটাইয়া হেমন্তের দুই পা ম্বিগুণতর আবেগে চাপিয়া ধরিল, চরণ চুম্বন করিয়া পায়ের ধলা মাথায় লইয়া পা ছাড়িয়া দিল । হেমন্ত উঠিয়া গিয়া পিতাকে বলিল, “আমি সত্রীকে ত্যাগ করিব না।” হরিহব গজিয়া উঠিয়া কহিল, “জাত খোয়াইবি ?" হেমন্সত কহিল, “আমি জাত মানি না।”