পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এরকম ক'রে গোলমাল করে পরামর্শ করে কর্তব্য স্থির হয় না। আমাকে একটু মাপ করতে হবে। এ সম্বন্ধে আমাকে এখন কিছু বোলো না। আমি একটু একলা থাকতে চাই।”



৪৮

 সুচরিতা ভাবিতে লাগিল ললিতা এ কী কাণ্ড বাধাইয়া বসিল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ললিতার গলা ধরিয়া কহিল, “আমার কিন্তু ভাই ভয় হচ্ছে।”

 ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের ভয়?”

 সুচরিতা কহিল, “ব্রাহ্মসমাজে তো চারি দিকে হুলস্থূল পড়ে গেছে— কিন্তু শেষকালে বিনয়বাবু যদি রাজি না হন?”

 ললিতা মুখ নিচু করিয়া দৃঢ়স্বরে কহিল, “তিনি রাজি হবেনই।”

 সুচরিতা কহিল, “তুই তো জানিস, পানুবাবু মাকে ঐ আশ্বাস দিয়ে গেছেন যে বিনয় কখনোই তাদের সমাজ পরিত্যাগ করে এই বিয়ে করতে রাজি হবে না। ললিতা, কেন তুই সব দিক না ভেবে পানুবাবুর কাছে কথাটা অমন করে বলে ফেললি।”

 ললিতা কহিল, “বলেছি ব'লে আমার এখনো অনুতাপ হচ্ছে না। পানুবাবু মনে করেছিলেন তিনি এবং তাঁর সমাজ আমাকে শিকারের জন্তুর মতো তাড়া করে একেবারে অতল সমুদ্রের ধার পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন, এইখানে আমাকে ধরা দিতেই হবে— তিনি জানেন না এই সমুদ্রে লাফিয়ে পড়তে আমি ভয় করি নে— তাঁর শিকারী কুকুরের তাড়ায় তাঁর পিঞ্জরের মধ্যে ঢুকতেই আমার ভয়।”

 সুচরিতা কহিল, “একবার বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে দেখি।”

 ললিতা কহিল, “বাবা কখনো শিকারের দলে যোগ দেবেন না এ আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি। তিনি তো কোনোদিন আমাদের শিকলে বাঁধতে চান নি। তাঁর মতের সঙ্গে যখন কোনোদিন আমাদের কিছু অনৈক্য ঘটেছে,

৩৭৬