অকৃতজ্ঞ নই, তার সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির।”
সুচরিতা কহিল, “ওতে কেবল আপনারই গুণের পরিচয় দিচ্ছেন।”
বিনয় কহিল, “আমার গুণের পরিচয় কিন্তু আমার কাছে কিছু পাবেন। পেতে চান তো মার কাছে আসবেন, স্তম্ভিত হয়ে যাবেন, ওঁর মুখে যখন শুনি আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই। মা যদি আমার জীবনচরিত লেখেন তা হলে আমি সকাল-সকাল মরতে রাজি আছি।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “শুনছ একবার ছেলের কথা?”
গোরা কহিল, “বিনয়, তোমার বাপ-মা সার্থক তোমার নাম রেখেছিলেন।”
বিনয় কহিল, “আমার কাছে বোধ হয় তাঁরা আর-কোনো গুণ প্রত্যাশা করেন নি বলেই বিনয় গুণটির জন্যে দোহাই পেড়ে গিয়েছেন, নইলে সংসারে হাস্যাস্পদ হতে হত।”
এমনি করিয়া প্রথম আলাপের সংকোচ কাটিয়া গেল।
বিদায় লইবার সময় সুচরিতা বিনয়কে বলিল, “আপনি একবার আমাদের ও দিকে যাবেন না?”
সুচরিতা বিনয়কে যাইতে বলিল, গোরাকে বলিতে পারিল না। গোরা তাহার ঠিক অর্থটা বুঝিল না, তাহার মনের মধ্যে একটা আঘাত বাজিল। বিনয় যে সহজেই সকলের মাঝখানে আপনার স্থান করিয়া লইতে পারে আর গোরা তাহা পারে না, এজন্য গোরা ইতিপূর্বে কোনোদিন কিছুমাত্র খেদ অনুভব করে নাই- আজ নিজের প্রকৃতির এই অভাবকে অভাব বলিয়া বুঝিল।
৫৫
ললিতার সঙ্গে তাহর বিবাহপ্রসঙ্গ আলোচনা করিবার জন্যই যে সুচরিতা বিনয়কে ডাকিয়া গেল, বিনয় তাহা বুঝিয়াছিল। এই প্রস্তাবটিকে সে শেষ
৪১৩