পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* চারিত্রিপূজা মহৰ্ষির জীবনে এই প্রশ্নের কী উত্তর পাই ? দেখিতে পাই,তিনি তঁাহার পূর্বতন সমস্ত সংস্কার, সমস্ত আশ্রয় পরিত্যাগ করিয়া একেবারে রিক্তহস্তে বাহির হইয়া পড়িয়াছেন। সমাজের প্রচলিত প্ৰথা তাহাকে ধরিয়া রাখে। নাই, শাস্ত্ৰ তাহাকে আশ্রয় দেয় নাই। তাহার ব্যাকুলতাই তাহাকে পথ দেখাইয়া চলিয়াছে। সে পথ তাহার নিজেরই প্ৰকৃতির গভীর গোপন-পথ । সব পথ ছাড়িয়া সেই পথ তাহাকে নিজে আবিষ্কার করিয়া লইতে হইয়াছে। এ আবিষ্কার করিবার ধৈৰ্য্য ও সাহস তাহার থাকিত না, তিনিও পাঁচজনের পথে চলিয়া, ধৰ্ম্ম না হউক, ধাৰ্ম্মিকতা লাভ করিয়া সন্তুষ্ট থাকিতেন। কিন্তু তাহার পক্ষে যে না পাইলে নয় হইয়া উঠিয়াছিল, সেইজন্য র্তাহাকে নিজের পথ নিজেকে বাহির করিতে হইয়াছিল। সেজন্য তঁহাকে যত দুঃখ, যত তিরস্কার হউক, সমস্ত স্বীকার করিতে হইয়াছিল-ইহা বঁাচাইবার জো নাই। ঈশ্বর যে তাহাই চান। তিনি। বিশ্বের ঈশ্বর হইয়াও আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একটি নিতান্ত একমাত্র স্বতন্ত্র সম্বন্ধে ধরা দিবেন-সেইজন্য আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে তিনি একটি দুৰ্ভেদ্য স্বাতন্ত্র্যকে চারিদিকের আক্রমণ হইতে নিয়ত রক্ষা করিয়াছেন- এই অতি নিৰ্ম্মল নিৰ্জন-নিভৃত স্বাতন্ত্র্যের মধ্যেই তাহার সঙ্গে আমাদের মিলনের স্থান নির্দিষ্ট রহিয়াছে। সেইখানকার দ্বার যখন আমরা নিজের চেষ্টায় খুলিয়া তাহার কাছে আমাদের সেই চরম স্বাতন্ত্র্যের অধিকার একেবারে ছাড়িয়া দিব, বিশ্বের মধ্যে যাহা আমি ছাড়া আর কাহারো নহে, সেইটেই যখন র্তাহার কাছে সমৰ্পণ করিতে পারিব, তখনই আর আমার কিছু বাকি থাকিবে না, তখনই তঁাহাকে । পাওয়া হইবে। এই যে আমাদের স্বাতন্ত্র্যের দ্বার, ইহার প্রত্যেকের চাবি স্বতন্ত্র ; একজনের চাবি দিয়া আর একজনের দ্বার খুলিবে না। পৃথিবীতে যাহারা ঈশ্বরকে না পাওয়া পৰ্যন্ত থামেন নাই, তাহারা সকলেই ব্যাকুলতার নির্দেশ মানিয়া নিজের চাবি নিজে যেমন করিয়া পারেন।