পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত GS ভাসে না । তৃণের পথ এবং মাছের পথ সর্বদাই এক নহে। মাছকে খাদ্যের অনুসরণে, আত্মরক্ষার উত্তেজনায় নিয়ত আপনার পথ আপনি খুজিয়া লইতে হয়, তৃণ সে প্রয়োজন অনুভবই করে না। মননক্রিয়াদ্বারা যে মন জীবিত, তাহাকেও আত্মরক্ষার জন্যই নিজের পথ নিজে খুজিয়া বাহির করিতে হয়। দশজনের মধ্যে ভাসিয়া চলা তাহার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব । সাধারণ বাঙালীর সহিত বিদ্যাসাগরের যে একটি জাতিগত সুমহান ‘প্ৰভেদ দেখিতে পাওয়া যায়, সে প্ৰভেদ শাস্ত্ৰি মহাশয় যোগবশিষ্ঠের একটিমাত্র শ্লোকের দ্বারা পরিস্ফুট করিয়াছেন। আমাদের অপেক্ষা বিদ্যাসাগরের একটা জীবন অধিক ছিল। তিনি কেবল দ্বিজ ছিলেন না, তিনি দ্বিগুণী-জীবিত ছিলেন। সেইজন্য র্তাহার লক্ষ্য, তাহার আচরণ, তাহার কাৰ্য্যপ্ৰণালী আমাদের মতো ছিল না। আমাদের সম্মুখে আছে আমাদের ব্যক্তিগত সুখদুঃখ, ব্যক্তিগত লাভক্ষতি ; তাহার সম্মুখেও অবশ্য সেগুলা ছিল, কিন্তু তাহার উপরও ছিল তাহার অন্তজীবনের সুখদুঃখ, মনোজীবনের লাভক্ষতি । সেই সুখদুঃখ-লাভক্ষতির নিকট বাহ সুখদুঃখ-লাভক্ষতি কিছুই নহে। আমাদের বহির্জীবনেরও একটা লক্ষ্য আছে, তাহাকে সমস্ত জড়াইয়া এক কথায় স্বাৰ্থ বলা যায় । আমাদের খাওয়া-পর-শোওয়া, কাজকৰ্ম্ম করা, সমস্ত স্বার্থের অঙ্গ । ইহাই আমাদের বহির্জীবনের মূলগ্রন্থি। মননের দ্বারা আমরা যে অন্তজীবন লাভ করি, তাহার মূল লক্ষ্য পরমার্থ। এই আমমহল ও খাসমহলের দুই কৰ্ত্ত-স্বার্থ ও পরমাৰ্থ, ইহাদের সামঞ্জস্যসাধন করিয়া চলাই মানবজীবনের আদর্শ। কিন্তু মধ্যে মধ্যে সংসারের বিপাকে পড়িয়া যে অবস্থায় ‘আৰ্দ্ধং ত্যজাতি পণ্ডিতঃ’, তখন