পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

rve চারিত্রপূজা সকল দিক হইতেই রিক্ত করিতে কে পারে—যাহার অন্তঃকরণ জগতের আদিশক্তির অক্ষয় নিৰ্ব্বারধারায় অহরহ পূর্ণ হইয়া না উঠিতেছে। ইহাকে যেমন আমরা সম্পদে-বিপদে অভয় আশ্রয়ে অবিচলিত দেখিয়াছি-তেমনি একবার বর্তমান সমাজের প্রতিকূলে, আর একবার হিন্দুসমাজের অনুকূলে তাহাকে সত্যে-বিশ্বাসে দৃঢ় থাকিতে দেখিলাম --দেখিলাম, উপস্থিত গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা তাহাকে টলাইতে পারিল না-হিন্দুসমাজের মধ্যে তিনি পরম দুর্দিনেও একাকী দাড়াইয়াছিলেন, ব্ৰাহ্মসমাজে তিনি নব আশা, নব উৎসাহের অভু্যদয়ের মুখে পুনর্বার সমস্ত ত্যাগ করিয়া একাকী দাড়াইলেন । তাহার কেবল এই প্রার্থনা রহিল, “মাহং ব্ৰহ্ম নিরাকুৰ্য্যাং মা মা ব্ৰহ্ম নিরাকারোৎ”-আমি ব্ৰহ্মকে ত্যাগ করিলাম না, ব্ৰহ্ম আমাকে ত্যাগ না করুন ! ধনসম্পদের স্বর্ণস্তু পরচিত। ঘনান্ধকার ভেদ করিয়া, নবযৌবনের অপরিতৃপ্ত প্ৰবৃত্তির পরিবেষ্টনের মধ্যে দিব্যজ্যোতি যাহার ললাটস্পর্শ করিয়াছিল, ঘনীভূত বিপদের ভ্ৰকুটীকুটিল রুদ্রচ্ছায়ায় আসন্ন দারিদ্র্যের উদ্যত বজদণ্ডের সম্মুখেও ঈশ্বরের প্রসন্ন মুখচ্ছবি যাহার অনিমেষ অস্তদৃষ্টির সম্মুখে আচঞ্চল ছিল, দুদিনের সময়েও সমস্ত লোকভয় অতিক্রম করিয়া র্যাহার কর্ণে ধৰ্ম্মের “মা ভৈঃ’বাণী সুস্পষ্ট ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছিল, বলবৃদ্ধি-দলপুষ্টির মুখে যিনি বিশ্বাসের বলে সমস্ত সহায় হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া নিঃসঙ্কোচে পরম সহায়ের আশ্রয়গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, অন্য তঁাহার পুণ্যচেষ্টাভুয়িষ্ঠ সুদীর্ঘ জীবনদিনের সায়াহ্নকাল সমাগত হইয়াছে। অদ্য তাহার ক্লান্তকণ্ঠের স্বর ক্ষীণ, কিন্তু তঁাহার সম্পূৰ্ণপ্ৰায় জীবনের নিঃশব্দবাণী সুস্পষ্টতর, অদ্য র্তাহার ইহজীবনের কৰ্ম্ম সমাপ্ত, কিন্তু তঁাহার জীবনব্যাপী কৰ্ম্মচেষ্টার মূলদেশ হইতে যে একাগ্ৰনিষ্ঠ উৰ্দ্ধলোকে উঠিয়াছে, তাহা আজ নিস্তব্ধভাবে প্ৰকাশমান। অন্য তিনি তাহার এই বৃহৎ সংসারের বহিদ্বারে আসিয়া দাড়াইয়াছেন, কিন্তু সংসারের সমস্ত