বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের জাহাজ এসে দাঁড়িয়েচে। আজ অৰ্দ্ধরাত্রে পৌছবে রিয়ো ডে জেনৈরোতে। তার পরে মাডেবা দ্বীপে, তার পরে বার্সেলোনা, তার পরে জেনোয়া। দেশ থেকে বহু দূরে ছিলুম, ডাক পৌছতে দেড় মাস লাগত। এখন দেশের কাছের দিকে চলেচি বলে মন খুসি আছে। বুয়েনোস আইরেস থেকে বেরিয়ে পড়বার জন্যে খুব চেষ্টা করেছিলুম, কিন্তু নানা চক্রান্তে কোনোমতেই ঘটে উঠল না। এতদিনে হয়ত খবর পেয়ে থাকবে এখানে আসবার পথে জাহাজে আমাকে ইনফ্লুয়েঞ্জায় ধরে ছিল, আমাকে কিছু অতিরিক্ত কাবু করেছিল; একে ত জাহাজের ক্যাবিনে বদ্ধ হয়ে বাস করাই একটা রোগবিশেষ তার উপরে ইনফ্লুয়েঞ্জা যেন ভূতের মত বুকের উপরে চেপে বসে ছিল— রাত্রে ঘুম ছিল না, দিনে শাস্তি ছিল না। এই অবস্থায় একখানা খাতা হাতে করে কবিতা লেখা ছাড়া আমার আর কোনো সান্ধনা ছিল না। কত কবিতাই যে লিখেচি তার আর ঠিকানা নেই— খাতা ভরে গেছে। অবশেষে জাহাজ ডাঙায় এসে পৌঁছল। আমার আসল নিমন্ত্রণ ছিল পেরুতে— আমাদের পথের খরচ তারাই জুগিয়েচে। ঠিক একশো বছর পূৰ্ব্বে পেরু স্পেনের রাজ্যপাশ থেকে মুক্তিলাভ করেছিল— তারই শতবার্ষিকী স্মরণোৎসব সভায় আমার নিমন্ত্রণ • আর্জেন্টীন হয়ে তারই রাস্তা। মাঝখানে আগুেস পাহাড়। তুমি জানো, আগুেসের উচ্চতা হিমালয়ের ঠিক পরেই। এই আগুেসের উপর দিয়ে রেলগাড়ির পথ— বোধ হয় ১৫০০০ ফিট উচু হবে; সেখানে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। পাহাড় পার হয়ে চিলি, সেখানে ভালপারেজো বন্দরে আবার জাহাজ অবলম্বন করে পাঁচ ছয় দিন পরে তবে পেরুতে পৌঁছনো যায়। কম কাণ্ড নয়। দশই ডিসেম্বর তারিখে ওদের উৎসব। আমরা আর্জেন্টীনে পৌঁছলুম, নভেম্বরের শেষের দিকে। অতএব আর বিলম্ব না করে পেরু যাবার উদ্যোগে প্রবৃত্ত হওয়া গেল। কিন্তু শরীর বিগড়ে আছে— বুকের পাঁজরের মধ্যে একটা দুৰ্ব্বলতা বাসা বেঁধে মাঝে মাঝে পাখা ঝাপটাচ্চে। অতএব ডাকো ডাক্তার। ২৯৭