পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
ছিন্নমুকুল

থাক, তোমার সঙ্গে আমি ভিক্ষা করে জীবন কাটাব, তোমার সঙ্গে বনবাসেও আমার সুখ, তুমি যদি এখানে না থাক তাহলে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে চল।” পত্নীর প্রেমময় করুণবাক্যে দয়ানন্দ যেন কিছু নরম হইলেন। কিন্তু শশুরবাটী ত্যাগ করিবেন এই যে তাঁহার দৃঢ় সঙ্কল্প, তাহা কোন মতেই টলিল না। তিনি সেইদিনই শ্বশুরালয় পরিত্যাগ করিয়া গেলেন।

 দিন যায় মাস যায়, দয়ানন্দের আর কোন খবর নাই, সুশীলা চাতকিনীর ন্যায় তাঁহার পত্রের জন্য হা-প্রত্যাশ করিয়া থাকেন, প্রত্যহই ভাবেন, আজ নিশ্চয়ই তাঁহার পত্র পাইব, শেষে রাত্রি হইলে হতাশ হইয়া অশ্রুবারিতে মনের জ্বালা নিবারণ করেন। যদি এই দুঃখময় পৃথিবীতে ঈশ্বর আমাদের অশ্রুজল না দিতেন, জানিনা তাহা হইলে কি হইত। ক্রমে একবর্ষ দুইবর্ষ অতীত হইল, তবুও কোন সংবাদ নাই। অবশেষে তৃতীয় বৎসরের শেষে জনরবে শোনা গেল—তিনি কলিকাতা হইতে উড়িষ্যা গমন করিতেছিলেন, ঝড়ে জাহাজ ডুবি হইয়া তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে। এই সংবাদে সুশীলা অত্যন্ত মর্ম্ম-পীড়িত হইলেন। তাহার পর হইতে তিনি বিধবাবেশ ধারণ করিয়াছিলেন।

 এদিকে দয়ানন্দ শ্বশুরালয় ত্যাগ করিয়া কানপুরে আসিয়া সন্ন্যাসী ফকীরের দলে মিশিলেন। যে বিজন মন্দির এখন তাঁহার সম্পত্তি সেই মন্দিরের ভূতপূর্ব্ব সন্ন্যাসী একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন। সংস্কৃত চর্চ্চার অভিপ্রায়ে দয়ানন্দ ইহাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া ক্রমশ গুরুর এতদূর প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিলেন যে, গুরু মৃত্যুকালে ইহঁকে আপন উত্তরাধিকারী করিয়া গেলেন।

 দয়ানন্দের দ্বিতীয় বার দারগ্রহণের বিররণ এইরূপ। কানপুর হইতে কোন একসময় গুরুর সহিত শ্রীক্ষেত্র যাত্রাকালে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত গরীব ব্রাহ্মণ-সহযাত্রী কর্ত্তৃক বিশেষ অনুরুদ্ধ এবং গুরুরাদেশ লঙ্ঘনে