পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
১১৭

অপারগ হইয়া ইনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। নীরজা এই বিবাহের একমাত্র সন্তান, কন্যা জন্মিবার অল্পদিন পরেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। পত্নী বিয়ােগের পর দয়ানন্দের পূর্ব্বস্মৃতি রুদ্রভাববিরহিত সুকোমল ভাবে মনে উদিত হইল। সুশীলার প্রতি তিনি কিরূপ কঠোর ব্যবহার করিয়াছেন, তাহা বুঝিতে পারিলেন; নিজের অপরাধ হৃদয়ঙ্গম করিয়া, শ্বশুরকৃত অপমান ভুলিয়া গেলেন। তখন সুশীলাকে দেখিতে আসিবার ইচ্ছা হইল, কিন্তু তখন আর কোন্ মুখে দেখা করিতে আসেন? যাহাকে ত্যাগ করিয়া বিবাহ পর্য্যন্ত করিয়াছেন, এখন তাহার নিকট আর কি করিয়া আসিবেন! এইবার নীরজাকে লইয়া কলিকাতা হইতে কানপুর যাইবার সময় কোন মেলা উপলক্ষে কন্যার সহিত কয়েক দিন এলাহাবাদে তিনি বাস করিয়া গেলেন কিন্তু ইচ্ছা সত্ত্বেও কোন মতে একদিন সুশীলার সহিত দেখা করতে আসিতে পারিলেন না।

 সুশীলার বাড়ী বেণীঘাট হইতে অধিক দূরে নহে, নীরজা সন্ধ্যাকালে তীরভ্রমণ করিতে করিতে প্রায়ই তাঁহাদের বাড়ীর কাছে আসিয়া পড়িত। কখনও উদ্যানের ঘাটে আসিয়া বসিত, কখনও বা তীরে তীরে বেড়াইয়া দূর হইতে বাড়ীর আলােকের দিকে চাহিয়া চাহিয়া ফিরিয়া যাইত। কেজানে কেন, নিস্তব্ধ নিশীথে সেই শ্বেত নিস্তব্ধ অট্টালিকার দিকে চাহিয়া সে কেমন যেন মুগ্ধ হইয়া পড়িত। মঙ্গলগ্রহের দিকে চাহিয়া কল্পনা সূত্রে বৈজ্ঞানিকের যেমন তাহার জীবদিগের সহিত আলাপ করিতে ইচ্ছা হয়, নীরজাও তেমনই ভাবে সেই অট্টালিকার প্রতি আকৃষ্ট নেত্রে চাহিয়া তাহার অন্তস্থ অজ্ঞাত প্রাণীর পরিচয়ে কুতূহলী হইয়া কত কি কল্পনা করিত।

 অন্যদিনের মত সেই বর্ষা রজনীতেও নীরজা নদীতীরে ভ্রমণ করিতেছিল। কিছুক্ষণ হইতে মেঘ করিয়াছিল কিন্তু নীরজা অরণ্যরালিকা, বৃষ্টির ভয় তাহার ছিল না, যখন মেঘ ঘনাইয়া আসিল, বিদ্যুৎ চমকিতে