পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
ছিন্নমুকুল

 “আচ্ছা, তোমার বাবা যখন মরেন তখন তোমার বয়স কত? তখনকার কথা তোমার কি মনে আছে?”

 কনক বলিল “কিছু কিছু মনে পড়ে বই কি। আমার বয়স আর তখন কত হবে—এই চার পাঁচ বছর।”

 যু। উঃ! তোমার তত ছোট বেলার কথা মনে আছে—আশ্চর্য্য তো?

 ক। আমার কষ্টের কথা গুলিই যেন বেশী মনে আছে— মা দাদাকে আদর করতেন—আমার এমন ইচ্ছা হোত—”

 হিরণকুমারের চক্ষে জল আসিল তিনি মনে মনে বলিতে লাগিলেন এই হৃদয়ে যতদিন শোণিত-ধারা বহিবে ততদিন শত সহস্র জনক জননীর আদর আমি তোমাকে দিতে পারি।” কনক তাঁহার বিষন্নতায় কিছু আশ্চর্য্য হইল। কনকের বাল্যদুঃখে যুবা এতদূর দুঃখিত হইলেন যে তাঁহার চক্ষু জলপূর্ণ হইল! কই কনকের দুঃখে তো কেহ কখনো কাঁদে নাই; কনক বিস্ময়পূর্ণ দৃষ্টিতে যুবাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। যুবা তাহার এই সন্দেহের ভাব যেন কিছু বুঝিতে পারিয়া মনে মনে দুঃখিত হইলেন। কিন্তু, যুবার দিকে চাহিয়া কনক যখন তাঁহার সেই স্নেহপুর্ণ মুখকান্তি দেখিল, অবিশ্বাস করিয়াছিল বলিয়া তাঁহার সেই মমতাময় চক্ষের নীরব অথচ করুণ তিরস্কার দেখিতে পাইল, তখন আর কনকের সন্দেহ রহিল না, তাঁহার স্নেহে বালিকার সম্পূর্ণ বিশ্বাস জন্মিল। এই বিশ্বাসই কনকের কাল হইল, এই স্নেহের পরিবর্ত্তে অজ্ঞাতভাবে সে আপন হৃদয় বিনিময় করিয়া ফেলিল।

 হিরণ ব্যাকুলভাবে চক্ষু মুছিয়া বলিলেন—“তোমার দুঃখের কথাই মনে আছে, সুখের কথা কিছুই কি মনে পড়ে না?”

 ক। পড়ে না যে তা না। ছেলে বেলা এক দিন একজন