পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
১২৫

ভোগের জন্য ইহারা কেন বাঁচাইলেন? ভাবিতে ভাবিতে হিরণকুমারের করুণ দৃষ্টিতে কনকের বিষণ্ণ দৃষ্টি সংলগ্ন হইল, অমনি কনকের চক্ষু নত হইয়া পড়িল, সেই পাংশুবর্ণ মুখ-মণ্ডলও ঈষৎ উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল। হিরণ ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করিলেন “আজ কি আপনি ভাল আছেন?” চিকিৎসক তখন অপর কক্ষে ছিলেন। সহসা এই কক্ষে আসিয়া বলিলেন “বেশী কথা কইও না, এখনো বড় দুর্ব্বল।” কিন্তু হিরণকুমারের সেই সকরুণ সোৎসুক জিজ্ঞাসায় কনকের নতচক্ষু আবার উন্নত হইল, যেন বিস্মিত ও সন্দিগ্ধ চিত্তে সে তাঁহার দিকে আবার চাহিল। কনকের জন্য সুশীলা ছাড়া কেহ কখনো উৎসুক হন নাই, আজ এই অপরিচিত যুবা তাহার জন্য কাতর হইবেন, ইহা যেন কনকের স্বপ্নবৎ বোধ হইল।

 ক্রমে এক মাসের মধ্যে বালিকা সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিল। সহকারী কার্য্যোপলক্ষে স্থানান্তরে চলিয়া গেলেন, হিরণকুমার বালিকার পরিচয় পাইয়া এলাহাবাদে বোট লইয়া যাইতে অনুমতি করিলেন। এলাহাবাদে পৌঁছিতেও প্রায় মাস খানেক লাগিল। এই একমাসে আস্তে আস্তে বালিকা যুবকের সহিত পরিচিত হইতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে তাহার লজ্জা ভাঙ্গিতে লাগিল। প্রথমে একটি কথা কহিতেও তাহার লজ্জা হইত, ক্রমে অল্পে অল্পে একটি দুইটি করিয়া তাহার কথা ফুটিল। একবার লজ্জা ভাঙ্গিয়া গেলে বালিকা একটী একটী করিয়া তখন কত গল্পই করিল। হিরণকুমারও তাহার সহিত আত্মীয়ের মতই ব্যবহার করিতে লাগিলেন। একদিন কনকের শয্যার নিকট বসিয়া হিরণকুমার একটা কথার পর একটা কথা জিজ্ঞাসা করিয়া বালিকার গল্প শুনিতেছিলেন। কথার মধ্যে তিনি একবার জিজ্ঞাসা করিলেন—