পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ছিন্নমুকুল

সহসা তাঁহাদের কর্ণকুহর মুগ্ধ করিয়া নীরব নৈশ গগনে সঙ্গীতধ্বনি উথলিয়া উঠিল। বনমধ্যে মনুষ্যের কণ্ঠস্বর শুনিয়া তাঁহাদের দেহে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হইল। সঙ্গীত ধ্বনি ক্রমে বাতাসে তাঁহাদের দিকেই আসিতে লাগিল। গানটী শুনিতে তাঁহারা এক মনে কান পাতিলেন। প্রথমে কেবল সুরমাত্র, পরে অস্পষ্ট, পরিশেষে স্পষ্ট কথাগুলি তাঁহাদেব কর্ণে প্রবেশ করিল, তাঁহারা শুনিলেন—

[১]সুশীতল মহীরুহ-সুশীতল ছায়
তেয়াগি অনলকুণ্ডে ঝাঁপিতে যে চায়,
রমণীর বেলা-ভূমি করি পরিহার,
উন্মত্ত সাগর মাঝে যেতে সাধ যার,
দুর্গ ছাড়ি সহিবে যে সমর-পীড়ন,
যাক্ সে এ বন ছাড়ি যথা তার মন।
এমন সুখদ কানন-বাস,
পশে না হেথায় শোকের শ্বাস,
হেথায় শান্তি বিরাজমান,
কলহের হেথা নাহিক স্থান,
এ ছেড়ে কি দেবধামে কারো মন ধায়।

 আকাশে পূর্ণচন্দ্র ভাসিয়া উঠিল, অন্ধকারের বিকট মুর্ত্তি ধীরে ধীরে উজ্জ্বলতার মধ্যে আত্মলোপ করিয়া দিল; বনানী সেই মধুর জ্যোৎস্নায় একখানি মধুর সুন্দর ছবির মত প্রতিভাত হইতে লাগিল। সহসা এ কি দৃশ্য! জ্যোৎস্না মূর্ত্তিমতী হইয়া কি বনানীর অস্ফূট অপূর্ণ সৌন্দর্য্য সহসা পরিস্ফুট সম্পূর্ণ করিয়া দিলেন? সুমধুর সঙ্গীততানে


  1. রাগিণী বাহার।