পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৫৭

যন্ত্রণা বই কনকের জন্য ত আর কিছুই রাখ নাই। এরূপ জ্বলন্ত আগুনে পোড়া অপেক্ষা কি জলে ডুবিয়া মরা ভাল ছিল না? না,না, বাঁচাইয়াছিলে বেশ করিয়াছ নহিলে এত যাতনা কে সহিত? নহিলে—নহিলে এত সুখই বা কে ভোগ করিত? নহিলে হিরণকুমার, তোমাকে দেখিবার সুখ, ভালবাসিবার সুখ কোথায় পাইতাম? এর পর এখন আজীবন কষ্ট পাই, সেও ভাল।”

 কনকের চিন্তা সহসা ভঙ্গ হইল; দেখিল নিকটে হিরণকুমার দণ্ডায়মান। সেই দুঃখের সময়, সেই যাতনা-পীড়িত মনের অবস্থায় সহসা হিরণকুমারকে দেখিতে পাইয়া বালিকার মনের ভাব কিরূপ হইল, বালিকা কিরূপ শান্তি পাইল, তাহা বলিবার নহে। নিমেষে যেন মন্ত্রবলে তাহার সকল দুঃখ দূর হইল! কিন্তু সেই এক সময়েই তাহার মনে আসিল, “কিন্তু এ দেখা কতক্ষণের? মুহূর্ত্ত মধ্যে হিরণকুমার চলিয়া যাইবেন, আর কখনও সম্ভবতঃ তাঁহাকে দেখিতে পাইবে না! যে জন আপনার হইতেও আপনার তাহাকে চিরকালের মত পর করিতে হইবে, তাঁহার সহিত সাক্ষাৎও দূষণীয় বলিয়া গণ্য হইবে!” গভীর দুঃখে মর্ম্মস্থল হইতে তাহার দীর্ঘনিশ্বাস উঠিল। হিরণকুমারও ঠিক এইরূপই ভাবিতেছিলেন! তাঁহার হৃদয়েও এইরূপ দুঃখের তরঙ্গ বহিতেছিল! তিনিও দীর্ঘনিশ্বাস সহকারে কনকের মনের কথার প্রতিধ্বনি তুলিয়া কহিলেন, “সতাই কি আমাদের এ শেষ দেখা? শেষ বিদায়? যে আমার জীবনের চেয়েও আপনার তার সঙ্গে দেখা করতে আসাও কি আমার এখন অন্যায় কাজ?

 হিরণকুমার থামিলেন, কনক নীরবে অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিল। তিনি সবলে নিশ্বাস গ্রহণ করিয়া আবার বলিলেন “কনক, আমার হৃদয় দগ্ধ হচ্ছে উচিত অনুচিত জ্ঞান এখন নেই। আমার ব্যবহারে তোমার পাছে কোন কষ্টের কারণ ঘটে এই কেবল আমার এক মাত্র ভয়, এক