পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষট্‌ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
২৭৭

শুনিয়া নীরজার আহ্লাদ ধরিল না। সেই প্রস্তাব করিল “তবে কানপুরে চল। অনেকদিন বাবাকে দেখিনি, মনটা ব্যাকুল হয়ে পড়েছে, আর—আমাদের বনটিকে, কুটিরটিকেও চল একবার দেখে আসি।” প্রমোদ আর একবার পূর্ব্বাভিনয় করিয়া সহাস্যে বলিলেন, “আমিও তাই মনে করেছি। কিন্তু বনের পাখীটি বন দেখে যেন শিকল কাটে না।”

 ক্রমে দু-এক দিনের মধ্যেই তাঁহাদের বেড়াইতে যাইবার সমস্ত উদ্যোগ হইয়া গেল।

 সকলই প্রস্তুত। দ্রব্য সামগ্রী যা কিছু বোটে উঠিতে বাকী ছিল সকলি উঠিল। দাসদাসীর কোলাহল আরম্ভ হইল। কনককে একাকী ফেলিয়া আজ তাঁহারা বোটে যাইবেন। অন্য সময় হইলে তিন জনেই যাইতেন; কিন্তু এখন কনক তাঁহাদের চক্ষের শূল, তাহাকে একাকী কষ্ট ভোগ করিবার জন্য রাখিয়া, তাঁহারা দুই জনেই বেড়াইতে চলিলেন।

 কনক সেই সকাল হইতে একাকী বারান্দায় দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া বোটে জিনিসপত্র উঠান দেখিতেছিল এবং কাঁদিতেছিল। যে ভ্রাতার জন্য আপনার জন্মেব সুখ বিসর্জ্জন দিল, প্রাণ হইতে প্রিয়তম, আপনার হইতেও আপনার হৃদয়সর্ব্বস্ব হিরণকে পর্য্যন্ত আজীবন কষ্টে ফেলিল, যে ভ্রাতার কষ্ট হইবে বলিয়া সে হিরণকে বিবাহ করিতেও অসম্মত হইল, সেই ভ্রাতার আচরণে কাঁদিবে না?

 নীরজা আজ আহ্লাদে পরিপূর্ণ। প্রথমতঃ কানপুরে বেড়াইতে যাইতেছে, আবার পিতাকে দেখিবে,— তাহার বাল্যসখীদের দেখিবে, সেই আজন্মপরিচিত অরণ্যভূমি—যেখানে প্রমোদকে প্রথমে দেখিয়াছিল সেইখানে আবার একত্রে দুজনে বেড়াইতে পারিবে,—এই সকল সুখের কল্পনা,—ইহার উপর আবার একটা গর্ব্বময় উচ্ছাস যে, তাহার সুখের