পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
১৯৫

 এই কথায় প্রমোদ অত্যন্ত ব্যাকুল ভাবে বলিলেন, “এ তো আমাদের কনক নয়? তার বয়স কত গো?”

 বৃদ্ধা। এই বাপু পনর ষোল হবে।

 এই কথা শুনিয়া অত্যন্ত ব্যাকুলতার সহিত প্রমোদ নীরজাকে বলিলেন, “তুমি এইখানে থাকো। আমার নিশ্চয়ই মনে হচ্চে এ কনক, আমি একবার দেখে আসি।”

 নীরজা বলিল, “কনক যদি এতক্ষণে আরবারের মত জলেই বা পড়ে গিয়ে থাকে?”

 বৃদ্ধা। ওগো সে মেয়েটি জলে পড়েনি গো, আমি তাকে বল্লুম “আমার সঙ্গে আসবে,” তা সে অমনি গান গাইতে গাইতে ঐ কোটা বাড়ীর ভিতর ঢুকলো, তারপর কি হয়েছে জানিনা। বৃদ্ধা প্রমোদের সহিত কুটিরের বাহিরে আসিয়া সেই বাড়ীর দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিল। তখন বিদ্যুতের মত প্রমোদ সেইদিকে ছুটিলেন! অল্পক্ষণের মধ্যেই বাড়ীতে প্রবেশ করিয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে দ্বিতলে উঠিলেন। হিরণ ইহারই পদশব্দ শুনিয়া কক্ষের বাহির হইয়াছিলেন। হিরণকে দেখিবামাত্র প্রমোদ উন্মত্তের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কনক কোথায়?” কথার গোলে পাছে কনকের নিদ্রা ভঙ্গ হয়, এই ভয়ে হিরণকুমার তাহাকে ধীরে ধীরে বলিলেন, “এই ঘরে, কিন্তু চুপ! চুপ! কনক ঘুমোচ্ছেন, গোল ক’রনা ঘুম ভেঙ্গে যাবে, ও ঘরে যেওনা।” প্রমোদ সে কথা অগ্রাহ্য করিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন। হিরণকুমার ব্যাকুল-ভাবে তাহার অনুসরণ করিলেন। কনকের শয্যাপার্শ্বে গিয়া প্রমোদ মনের ব্যগ্রতা ভরে ডাকিলেন,

 “দিদি আমার, কনক!” হিরণ তাহা শুনিয়া মৃদুস্বরে ব্যাকুল ভাবে বলিলেন, “চুপ! চুপ! কথা কয়োনা, গোল কোরোনা, এখনি কনকের ঘুম ভেঙ্গে যাবে।” প্রমোদ সে কথা না শুনিয়া কনকের