পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
৩৫

নীরজা এক দিন অন্যের হইবেই, নিতান্তই পর হইয়া যাইবে, যদি তখন কখনও দেখা হয় তো তাঁহার কাছ হইতে লুকাইবে, আর হয় তো কখনও দেখিতেও পাইবেন না। ভাবিতেও তাঁহার কষ্ট হইল, নৈরাশ্যাবেগে প্রমোদের ওষ্ঠাধর মৃদু মৃদু কাঁপিতে লাগিল, কিন্তু পরক্ষণেই তিনি প্রশান্ত ভাবে চৌকি হইতে উঠিয়া বেড়াইতে বেড়াইতে বলিলেন, “নূরজাহানের ছবি কখনো দেখেছিস্?”

 “দেখেছি। আমার ইচ্ছা হয় আমাদের অমনি একটি বেশ সুন্দর বৌ হয়। দাদা, তুমি বিয়ে করবে না? তাহলে আমার বেশ একটী সঙ্গী হয়।”

 প্রমোদের প্রফুল্ল অমায়িকতায় আশ্বস্ত হইয়া কনক আজ মুক্তকণ্ঠ, তাহাকে ঈষৎ প্রগল্‌ভ বলিতেও আমাদের সঙ্কোচ হইতেছে না। প্রমোদ কনকের সেই সরল প্রশ্নে ধীরে ধীরে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন, কি ভাবিতে ভাবিতে একটি সেল্ফের উপর, যেখানে কতকগুলি পুস্তক সজ্জিত ছিল সেইখানে আসিলেন, অন্য মনে তাহার মধ্য হইতে একখানি বই তুলিয়া হাতে লইলেন। কনক বলিল, “দাদা তোমাকে আজ অমন দেখছি কেন, তুমি আমাকে কি বলতে যাচ্ছিলে, কই বল্‌লে না?”

 প্রমোদ বলিলেন, “বলতে গিয়েছিলুম সত্য, কিন্তু কেন যে তোকে বলতে গেলুম তা তো জানি না”। কনক মুখটী চুন করিয়া বলিল, “আমাকে বল্‌লে কি দোষ হয়?”

 “তুই ছেলে মানুষ, তোর কাছে সে কথা বলতে যাওয়াই পাগলামি?”

 “কখনো তো কিছু বলতে আস না, তবে যে আজ বলতে এলে?”

 “পাগলামি, মনের চঞ্চলতা। কি আর বলব, কিছুই না।—তোকে আর এক দিন পড়া শুনা জিজ্ঞাসা করব, এখন পড়।”

 কনক দেখিল প্রমোদের মুখে তাঁহার সেই স্বাভাবিক চঞ্চল