পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৮৪

ছিঁড়িয়া গিয়াছে, নতুন একটা ইজের ছ’ আনা হইলে পাওয়া যায়, তা যেন ছ’টি মোহর। নবুর পাঁচ মাসের স্কুলের মাইনে বাকি, দুবেলা মাষ্টারে শাসায়, মুখুয্যেদের বাড়ির ঠাকুমার দেনার টাকার সুদের তাগাদা আর বাবার যত মিথ্যে কথা বানাইয়া বলা পাওনাদার বিদায় করিতে। আজ সে হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল।

 রাণাঘাট স্টেশনে গাড়ি বদল করিয়া মুর্শিদাবাদ লাইনের গাড়িতে চাপিতে হইল। মুড়াগাছায় নামিয়া ক্রোশখানেক হাঁটিয়া বৈকাল তিনটার সময় সে শ্বশুরবাড়িতে গিয়া পৌঁছিল।

 শাশুড়ী বৌকে দেখিয়া বলিলেন—এই যে নবাবের মেয়ে, তা এতদিন পরে কি মনে ক’রে? সঙ্গে কে? ছোট ভাই—ও সেই নবু না? এসো এসো বাবা, সুখে থাকো, চিরজীবী হও। তা বেশ ছেলেটি।

 কিন্তু শাশুড়ীর অমায়িকতা তিনদিনের মধ্যেই ঘুচিয়া গেল। রাধার বিধবা বড় ননদ ভ্রাতৃবধূকে পুনরায় এ বাড়িতে আসিতে দেখিয়া সন্তুষ্ট হন নাই। রাধার গলার ছ’ভরির হার সেবার শাশুড়ী কাড়িয়া রাখিয়াছিলেন, সেই হারছড়া ভাঙিয়া ননদের মেয়ের বিয়ের সময় হাতের রুলি আর বালা গড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে। বড় ননদ ভাবিয়াছিলেন, আজ ছ’বছর যে বৌ এ বাড়ি আসে নাই, সে আর আসিবে না। কিন্তু আপদ আবার আসিয়া যখন জুটিল, তখন তো হারের দাবি করিয়া বসিবে। হইলও তাই। রাধা শাশুড়ীর কাছে হার চাহিল। শাশুড়ী বলিলেন—তোমার বাবা যে টাকা বিয়েতে দেবেন বলেছিলেন, তা দেন নি—দুশো টাকা বাকি ছিল। তার দরুণ হার রেখে দিই। সে টাকা নিয়ে এসো আগে, হার এখুনি বার ক’রে দিচ্ছি।