পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯
জন্ম ও মৃত্যু 

নইলে এসব জায়গায় কি মানুষ আসে? কি মশা! কাল রাত্তিরে একদণ্ড চক্ষের পাতা বুজতে দেয়নি।

 রোয়াকের ধারে বসে মেজ ভাইয়ের ছেলে বিকাশ তাদের স্কুল কি ভাবে একটা ফুটবল ম্যাচ্ জিতেছে, মহাউৎসাহে সে গল্প করছে সেজ ভাইয়ের ছেলে বিনুর কাছে। বড় ভাইয়ের ছেলে ভোলা অবাক্ দৃষ্টিতে ওদের মুখের দিকে চেয়ে এক মনে গল্প শুনছে। তার বয়েস ওদের চেয়ে যদিও বেশি, কিন্তু জীবনে কখনো সে গাঁয়ের আপার প্রাইমারী পাঠশালা ছাড়া অন্য স্কুলের মুখ দেখেনি। এদের কাছে সে সর্বদা কুণ্ঠিত হ’য়ে আছে। শুধু ভোলা নয়—ভোলার মাকেও লক্ষ্য করলুম,—জায়েদের বড়মানুষি চালচলন ও কথাবার্তার মধ্যে নিতান্ত সঙ্কুচিত হ’য়ে আছে। জায়েরা বড়মানুষি দেখাবার জন্যে প্রত্যেকে ঝি, চাকর এনেছে, তাদের কাছেও যেন ও-বেচারী কুণ্ঠিত ও সঙ্কুচিত।

 হঠাৎ কোথা থেকে বিকাশের ছোট দিদি আরতি ঝড়ের মত এসে বললে—এই যে এখানে বসে গল্প হচ্ছে ছেলের। ওদিকে কাকীমা, দিদি—সব ডেকে ডেকে হয়রান, চা হ’য়ে গেছে, খেয়ে এসে সবারই মাথা কেনো, যাও—

 ওকে দেখেই আমার একটা ছবি মনে এসে গেল। বৃদ্ধা, মাজা বাঁকা, গাল তোবড়ানো শশী-ঠাকরুণ কাঁসার বাটি বিক্রয় করতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছে নাপিত-বাড়ি থেকে। এই হাসিমুখ বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী, তরুণী—এদের সৌন্দর্য, সজীবতা, আনন্দ, যৌবন—এদের সৃষ্টি করেছে সেই দরিদ্রা বৃদ্ধা শশী-ঠাকরুণ—এরা তারই বংশধর—তারই পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী, আজ তার মৃত্যু-বাসরে এই যে চাঁদের হাট বসেছে—এতদিন এরা ছিল কোথায়? এরা থাকতে বুড়ী