পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৬৮

খুশি হবে, কিসে তাকে তৃপ্তি দিতে পারব খাইয়ে, এই হ’ল আমার একমাত্র লক্ষ্য। সে জিনিসটা একটা নেশার মত আমায় পেয়ে বসল। সেই জংলী জায়গায় খাবার জিনিস মেলে না, আমি হেঁটে দূর দূর গ্রাম থেকে মাছ তরকারী বহুকষ্টে সংগ্রহ ক’রে এনে রাঁধতাম। মনিবকে সকল কথা খুলে বলতাম না যে, কোথা থেকে কি জিনিস আনি। রান্না যতদূর সম্ভব ভালো করবার চেষ্টা করতাম, যাতে খেয়ে তৃপ্তি পায়।

 লোকটা যে ভালো লোক ছিল, তা নয়। মাইনে বাকি ফেলতে লাগল, বাজারের পয়সা চুরি করি, এমন সন্দেহও মাঝে মাঝে করতো। আমি সে সব গায়ে মাখিনি কোনোদিন। চার মাস এই ভাবে কাটল। এই চার মাসে আমার অন্য কোন ধ্যান-জ্ঞান ছিল না, কেবল মনিবকে ঠিক সময়ে দু’টি খেতে দেব এবং ভালো খেতে দেব।

 কিরকম দু’একটা উদাহরণ দিই।

 একবার শুনলুম মুংলী বলে একটা পাহাড়ী নদীতে বাঁধ বেঁধে সাঁওতালরা বড় চিংড়ি মাছ ধরবে। মাছ জিনিসটা ওদেশে বড় দুর্লভ বস্তু। টাকা-পয়সা ফেললেই পাবার যো নেই। চিংড়ি মাছ আনবার জন্যে ভয়ানক পাথর-তাতা রৌদ্রের মধ্যে সাত মাইল চলে গেলুম এবং মাছ নিয়ে ফিরে রাত্রে রান্না করে খাওয়ালুম মনিবকে। সে কথা বললুমও না যে কোথা থেকে মাছ এনেছি।

 চার মাস পরে রান্নার খ্যাতি ও প্রভুভক্তির কথা জরীপের তাঁবুর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সে দেশটাতে ভালো বাঙ্গালী রাঁধুনী পাওয়া যায় না, সকলেই আমার মনিবকে বেশ একটু