পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> R ශුෂ fersità ৩-সেনৱিবাণিজ-জাতক । , [ শান্ত শ্ৰাবন্তীনগরে অবস্থানকালে জনৈক হীনবীৰ্য ভিক্ষুসম্বন্ধে এই কথা বলিয়াছিলেন। এই সাধনা ত্যাগ করিয়া বিহারে ফিরিলে অপর ভিক্ষুগণ তাহাকে শাস্তার নিকট লইয়া গেলেন। শান্ত বলিলেন, “এই মাৰ্গফলপ্ৰদ শাসনে প্রবিষ্ট হইয়া যদি তুমি উৎসাহ পরিত্যাগ কর, তাহা হইলে লক্ষ মুদ্রা মূল্যের সুবৰ্ণপাত্র হইতে বঞ্চিত হইয়া সেরিব বণিকের যে দুৰ্দশা হইয়াছিল, তোমারও সেইরূপ হইবে।” অনস্তর ভিক্ষুগণ শাস্তাকে সেই কথা সবিস্তর বলিবার জন্য অনুরোধ করিলেন ; শাস্তাও তাঁহাদের অবগতির জন্য ভাবাস্তর-প্রতিচ্ছন্ন অতীত বৃত্তাক্ত বৰ্ণনা করিতে লাগিলেন :- ] পুরাকালে, বৰ্ত্তমান সময়ের চারিকল্প পুর্বে বোধিসত্ত্ব, সেরিব নামক রাজ্যে ফেরিওয়ালার কাজ* করিতেন। তখন তাহার নাম ছিল ‘সেরিবান । সেরিবরাজ্যে সেরিব নামে আরও এক ব্যক্তি ঐ কারবার করিত। উহার বড় অর্থলালসা ছিল। একদা বোধিসত্ত্ব তাহাকে সঙ্গে লইয়া তেলবাহনদের অপরপারে অন্ধপুরানগরে বাণিজ্য করিতে গিয়াছিলেন। সেখানে তাহারা কে কোন রাস্তায় ফেরি করিয়া বেড়াইবেন তাহা ভাগ করিয়া লইলেন ; কথা হইল এক জন যে রাস্তায় এক বার ফেরি করিয়া গিয়াছেন, অপর জন তাহার পরে সেখানেও ফেরি করিতে পরিবেন। অন্ধপুরে পূর্বে এক অতুলসম্পত্তিশালী শ্রেষ্টপরিবার বাস করিত। কালে কমলার কোপে পড়িয়া তাহারা নিধন হয়, একে একে পুরুষেরাও মারা যায়। যে সময়ের কথা হইতেছে, তখন ঐ বংশে কেবল একটী বালিকা ও তাহার বৃদ্ধ পিতামহী জীবিত ছিলেন। তাহারা অতিকষ্টে প্ৰতিবেশীদিগের বাড়ীতে কাজকৰ্ম্ম করিয়া দিনপাত করিতেন। বাড়ীর কৰ্ত্তা সৌভাগ্যের সময় যে সুবৰ্ণপাত্রে ভোজন করিতেন, সেট তখনও ছিল ; কিন্তু দীর্ঘকাল ব্যবহৃত না হওয়ায় এবং ভগ্নপাত্ৰাদির মধ্যে পড়িয়া থাকায় উহার উপর এত ময়লা জমিয়াছিল, যে সহসা উহা সোণার বাসন বলিয়া বোধ হইত না । একদিন লোভী, ফেরিওয়ালা “কলসী কিনিবে”, “কলসী কিনিবে” বলিতে বলিতে ঐ শ্রেষ্ঠীদিগের বাড়ীর পাশ দিয়া যাইতেছিল। তাহা শুনিয়া বালিকাটী বলিল, আমায় একখানা গহনা কিনিয়া দাওনা, দিদিম।” দিদিমা বলিলেন, “বাছা, আমরা গরিব লোক, পয়সা পাইব কোথায় ?” তখন বালিকা সেই সোণার বাসনখানি আনিয়া বলিল, “এইখানা বদল দিলে হয় না কি ? ইহা ত আমাদের কোন কাজে লাগে না।” বৃদ্ধ ইহাতে আপত্তি না করিয়া ফেরিওয়ালাকে ডাকিলেন এবং তাহাকে বসিতে বলিয়া বাসনখানি দিয়া বলিলেন, “মহাশয়, ইহার বদলে আপনার এই বোনটীকে যাহা হয় একটা জিনিস দিন ।” বাসনখানি দুই একবার উল্টাইয়া পাণ্টাইয়া দেখিয়া ফেরিওয়ালার সন্দেহ হইল, সম্ভবতঃ উহা স্বর্ণনিৰ্ম্মিত। এই অনুমান প্ৰকৃত কি না তাহা পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত সে সুচী দিয়া উহার পিঠে দাগ কাটল এবং উহা যে সোণার বাসন সে সম্বন্ধে তখন আর তাহার কিছুমাত্র ংশয় রহিল না। কিন্তু মেয়েমানুষ দুইটাকে ঠকাইয়া ইহা বিনামূল্যে লাইব, এই দুরভিসন্ধি করিয়া সে বলিল, “ইহার আবার দাম কি ? ইহা সিকি পয়সায় কিনিলেও ঠকা হয় ।” অনন্তর সে নিতান্ত অবজ্ঞার ভাণ করিয়া বাসনখানি ভূমিতে ফেলিয়া সে স্থান হইতে চলিয়া গেল। ইহার ক্ষণকাল পরেই বোধিসত্ত্ব সেই পথে ফেরি করিতে আসিলেন এবং “কলসী কিনিবে”, “কলসী কিনিবে” বলিতে বলিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরিতে লাগিলেন। তাহা গুনিয়া বালিকাটী তাহার পিতামহীকে আবার সেই প্রার্থনা জানাইল । বৃদ্ধ কহিলেন, “যে বাসন

  • মূলে কচ্ছপুটবাণিজে” এই পদ আছে। সম্ভবতঃ ইহার অর্থ “যে বণিক পণ্যভাণ্ড কক্ষে লইয়া ফেরি করিয়া বেড়ায়।” এইরূপ অর্থ গ্ৰহণ না করিলে পূর্বাপর সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় না, কারণ, বোধিসত্ত্ব ফেরি করিবার সময় “কলসী কিনিবে’ বলিয়া হাকিয়াছিলেন, অথচ বালিকা তাহা শুনিয়া গহনা (সম্ভবতঃ পিত্তলের) কিনিতে চাহিয়াছিল। ইহাতে বুঝিতে হইবে যে একালের ফেরিওয়ালের কৃষ্ঠায় তাহারও ভাণ্ডে বিক্রয়ের জন্য নানারূপ দ্রব্য ছিল।
  • মুলে “অৰ্দ্ধমাসক” এই শব্দ আছে। ১৩শ পৃষ্ঠে “কাহণ’ শব্দের টীকা দ্রষ্টব্য।