পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8V * প্ৰথম নিপাঠ ইহাকে লইয়া নদীতে স্নান করাও এবং গলায় মালা পরাইয়া, পঞ্চাঙ্গুলিক * দিয়া ও সাজাইয়া লইয়া আইস। তাহারা “যে আজ্ঞা” বলিয়া ছাগ লইয়া নদীতে গেল এবং উহাকে স্নান করাইয়া ও সাজাইয়া তীরে রাধিয়া দিল । তখন অতীতজন্মসমূহের বৃত্তান্ত ছাগের মনে পড়িল এবং “আজই আমার দুঃখের অবসান হইবে।” ভাবিয়া সে অতীব হর্ষের সহিত অট্টহাস্য করিয়া উঠিল; কিন্তু পরীক্ষণেই “আহা, আমি এত দিন যে দুঃখভোগ করিলাম। আমার প্রাণবধ করিয়া এই ব্ৰাহ্মণও অতঃপর সেই দুঃখ ভোগ করিবে” ইহা ভাবিয়া সে করুণা-পরবশ হইয়া চীৎকার করিয়া কান্দিতে লাগিল। তখন শিষ্যগণ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “ভাই, ছাগ, তুমি হাসিবার সময়েও বিকট শব্দ করিলে, কান্দিবার সময়েও বিকট শব্দ করিলে ! বল ত, তুমি হাসিলেই বা কেন, কান্দিলেই বা কেন ?” ছাগ বলিল, “তোমাদের অধ্যাপকের নিকট গিয়া আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিও ।” 臀 শিষ্যেরা ছাগ লইয়া অধ্যাপকের নিকট ফিরিয়া গেল এবং যাহা যাহা ঘটিয়াছিল সমস্ত নিবেদন করিল। তাহ শুনিয়া ব্ৰাহ্মণ নিজেই ছাগকে হাসিবার ও কান্দিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। ছাগ তখন জাতিস্মর হইয়াছিল। সে বলিল, “দ্বিজবর, এক সময়ে আমিও আপনার মত ত্ৰিবেদপারদর্শী ব্ৰাহ্মণ ছিলাম ; কিন্তু একবার একটা ছাগ বধ করিয়া মৃতকভক্ত দিয়াছিলাম বলিয়া সেই পাপে চারি শত নিরানব্বই বার ছােগজন্ম গ্ৰহণ করিয়া শিরশেছন্দ-যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছি। এই আমার পঞ্চশততম ও শেষ জন্ম। এখনই চিরকালের মত দুঃখের হাত হইতে পরিত্রাণ পাইব ভাবিয়া আমি হাসিয়াছি। আবার দেখিলাম, আমি ত পাঁচ শত বার শিরশেছদ ভোগ করিয়া মুক্ত হইতে চলিলাম ; কিন্তু আপনাকে আমার প্রাণবধজনিত পাপে ঠিক এইরূপে পােচ শত বার শিরশেছদ-দণ্ড পাইতে হইবে। কাজেই আপনার প্রতি করুণাপরবশ হইয়া কান্দিয়াছি।” 弱 এই কথা শুনিয়া ব্ৰাহ্মণ বলিলেন, “তোমার কোন ভয় নাই ; আমি তোমার প্রাণনাশ করিব না।” “আপনি মারুন, আর নাই মারুন, আজ আমার নিস্তার নাই।” “কোন চিন্তা নাই ; আমি সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া তোমায় রক্ষা করিব।” “দ্বিজবর, আপনি যে রক্ষার চেষ্টা করিবেন তাহা দুর্বল, আর আমার কৃতপাপের শক্তি প্ৰবল ৷” এইরূপ কথোপকথনের পর ব্ৰাহ্মণ ছাগকে বন্ধনমুক্ত করিয়া দিলেন এবং “দেখিব, কে এই ছাগকে মারে।” এই সঙ্কল্প করিয়া শিষ্যগণের সহিত উহার সঙ্গে সঙ্গে রহিলেন। ছাগ বন্ধনমুক্ত হইবামাত্ৰ এক খণ্ড প্ৰকাণ্ড প্রস্তরের উপর আরোহণ পূর্বক গ্ৰীবা প্রসারিত করিয়া গুল্মপত্ৰ খাইতে আরম্ভ করিল। ঠিক সেই সময়ে পাষাণের উপর বজ্ৰপাত হইল। তাহার । আঘাতে পাষাণ বিদীর্ণ হইয়া গেল এবং উহার এক খণ্ড এমন বেগে ছাগের প্রসারিত গ্রীবায় লাগিল যে তৎক্ষণাৎ তাহার দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িল । 鄙 এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখিয়া সেখানে বিস্তর লোক সমবেত হইল। তখন বোধিসত্ত্ব বৃক্ষ দেবতা হইয়া সেখানে বাস করিতেছিলেন । দৈবশক্তি প্ৰভাবে তিনি আকাশে বীরাসনে উপবেশন করিলেন ; সকলে সবিস্ময়ে তাহা দেখিতে লাগিল। বোধিসত্ত্ব ভাবিলেন, “আহা,

  • ইংরাজী অনুবাদক “পঞ্চাঙ্গুলিক” শব্দের অর্থ করিয়াছেন ‘একমুষ্টি শস্য’। কিন্তু ইহা সমীচীন বলিয়া মনে হয় না। লোকে সিন্দুর, চন্দন বা তদ্রুপ কোন রঞ্জন দ্রব্য হাতে মাখাইয়া গবাদি পশুর অঙ্গ-সৌষ্ঠবাৰ্থ তাহদের গায়ে ছাপ দিত।” বোধ হয় ইহাকেই পঞ্চাঙ্গুলিক বলা হইত। যে পশু বলি দেওয়া যাইত, সম্ভবতঃ তাহাকেও ঐরূপ সজ্জিত করিবার প্রথা ছিল। এখনও দেখা যায়, বলি দিবার পূর্বে ছাগের কপালে সিন্দূরের দাগ দেওয়া হইয়া থাকে। নন্দীবিলাস জাতকে (২৮) “গন্ধেন পঞ্চাঙ্গুলিম দত্ত্বা” – এই ব্যাপ্যারই সমর্থন করে। ।