পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
জাপান-যাত্রী

বিশ্বাস ছিল যে, য়ুরােপ যে-ধর্ম্মকে আশ্রয় করেছে, সেই ধর্ম্ম হয়ত তাকে শক্তি দিয়েচে—অতএব খৃষ্টানীকে কামানবন্দুকের সঙ্গে সঙ্গেই সংগ্রহ করা দরকার হবে। কিন্তু আধুনিক য়ুরােপে শক্তি-উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে কিছুকাল থেকে এই কথাটা ছড়িয়ে পড়েচে যে, খৃষ্টানধর্ম্ম স্বভাবদুর্ব্বলের ধর্ম্ম, তা বীরের ধর্ম্ম নয়। য়ুরােপ বল্‌তে সুরু করেছিল—যে-মানুষ ক্ষীণ, তারই স্বার্থ নম্রতা ক্ষমা ও ত্যাগধর্ম্ম প্রচার করা। সংসারে যারা পরাজিত, সে-ধর্ম্মে তাদেরই সুবিধা; সংসারে যারা জয়শীল, সে-ধর্ম্মে তাদের বাধা। এই কথাটা জাপানের মনে সহজেই লেগেচে। এইজন্যে জাপানের রাজশক্তি আজ মানুষের ধর্ম্মবুদ্ধিকে অবজ্ঞা করচে। এই অবজ্ঞা আর কোনাে দেশে চল্‌তে পারত না; কিন্তু জাপানে চল্‌তে পারচে, তার কারণ জাপানে এই বােধের বিকাশ ছিল না, এবং সেই বােধের অভাব নিয়েই জাপান আজ গর্ব্ব বােধ করচে—সে জান্‌চে পরকালের দাবী থেকে সে মুক্ত, এইজন্যই ইহকালে সে জয়ী হবে।

 জাপানের কর্ত্তৃপক্ষেরা যে ধর্ম্মকে বিশেষরূপে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, সে হচ্ছে শিন্তো ধর্ম্ম। তার কারণ এই ধর্ম্ম কেবল মাত্র সংস্কারমূলক; আধ্যাত্মিকতামূলক নয়। এই ধর্ম্ম রাজাকে এবং পূর্ব্ব-পুরুষদের দেবতা বলে মানে। সুতরাং স্বদেশাসক্তিকে সুতীব্র করে তােলবার উপায়রূপে এই সংস্কারকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 কিন্তু য়ুয়ােপীয় সভ্যতা মঙ্গোলীয় সভ্যতার মত এক-মহাল