পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী

চিত্তলোকে “আমি দেখচি” এই অনাবশ্যক আনন্দের কথাটা বলাই হচ্ছে আমার কাজ। এই কথাটা যদি ঠিক করে বল্‌তে পারি তাহলে অন্য সকল অমির দলও বিনা প্রয়োজনে খুসি হয়ে উঠবে। গান।

 উপনিষদে লিখচে, এক-ডালে দুই পাখী আছে, তার মধ্যে এক পাখী খায়, আর এক পাখী দেখে। যে পাখী দেখচে তারি আনন্দ বড় আনন্দ; কেন না, তার সে বিশুদ্ধ আনন্দ, মুক্ত আনন্দ। মানুষের নিজের মধ্যেই এই দুই পাখী আছে। এক পাখীর প্রয়োজন আছে, আর-এক পাখীর প্রয়োজন নেই। এক পাখী ভোগ করে আর-এক পাখী দেখে। যে-পাখী ভোগ করে সে নির্ম্মাণ করে, যে পাখী দেখে সে সৃষ্টি করে। নির্ম্মাণ করা মানে মাপে তৈরি করা; অর্থাৎ যেটা তৈরি করা হচ্ছে সেইটেই চরম নয়, সেইটেকে অন্য কিছুর মাপে তৈরি করা,― নিজের প্রয়োজনের মাপে বা অন্যের প্রয়োজনের মাপে। আর সৃষ্টি করা অন্য কোনো-কিছুর মাপের অপেক্ষা করে না, সে হচ্চে নিজেকে সর্জ্জন করা, নিজেকেই প্রকাশ করা। এই জন্যে ভোগী পাখী যে সমস্ত উপকরণ নিয়ে কাজ করচে তা প্রধানত বাইরের উপকরণ, আর দ্রষ্টা পাখীর উপকরণ হচ্ছে আমি পদার্থ। এই আমির প্রকাশই সাহিত্য, আর্ট। তার মধ্যে কোনো দায়ই নেই, কর্ত্তব্যের দায়ও না।

 পৃথিবীতে সব চেয়ে বড় রহস্য, দেখবার বস্তুটি নয়, যে দেখে সেই মানুষটি। এই রহস্য আপনি আপনার ইয়ত্তা পাচ্চে