পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যের সঙ্গী
১৪১

কাব্য লিখিতেছি—কিন্তু এই গর্ব উপভোগের প্রধান ব্যাঘাত ছিলেন বিহারী কবির ভক্ত পাঠিকাটি। তিনি সর্বদাই আমাকে একথাটি স্মরণ করাইয়া রাখিতেন যে “মন্দঃ কবিযশঃপ্রার্থী” আমি “গমিষ্যামুপহাস্যতাম্।” আমার অহংকারকে প্রশ্রয় দিলে তাহাকে দমন করা দুরূহ হইবে এ কথা তিনি নিশ্চয় বুঝিতেন—তাই কেবল কবিতা সম্বন্ধে নহে আমার গানের কণ্ঠ সম্বন্ধেও তিনি আমাকে কোনো মতে প্রশংসা করিতে চাহিতেন না, আর দুই একজনের সঙ্গে তুলনা করিয়া বলিতেন তাঁহাদের গলা কেমন মিষ্ট। আমারও মনে এ-ধারণা বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল যে আমার গলায় যথোচিত মিষ্টত নাই। কবিত্বশক্তি সম্বন্ধেও আমার মনটা যথেষ্ট দমিয়া গিয়াছিল বটে কিন্তু আত্মসম্মান লাভের পক্ষে আমার এই একটিমাত্র ক্ষেত্র অবশিষ্ট ছিল, কাজেই কাহারও কথায় আশা ছাড়িয়া দেওয়া চলে না—তা ছাড়া ভিতরে ভারি একটা দুরন্ত তাগিদ ছিল তাহাকে থামাইয়া রাখা কাহারও সাধ্যায়ত্ত ছিল না।