পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভৃত্যরাজক তন্ত্র
২৭

 কোনটা দুষ্ট এবং কোনটা শিষ্ট, ব্যাধ তাহা পাখির দিক হইতে দেখে না, নিজের দিক হইতেই দেখে। সেই জন্য গুলি খাইবার পূর্বেই যে সতর্ক পাখি চীৎকার করিয়া দল ভাগায় শিকারী তাহাকে গালি দেয়। মার খাইলে আমরা কাঁদিতাম, প্রহারকতা সেটাকে শিষ্টাচিত বলিয়া গণ্য করিত না। বস্তুত সেটা ভৃত্যরাজদের বিরুদ্ধে সিডিশন। আমার বেশ মনে আছে সেই সিডিশন সম্পূর্ণ দমন করিবার জন্য জল রাখিবার বড়ো বড়াে জালার মধ্যে আমাদের রােদনকে বিলুপ্ত করিয়া দিবার চেষ্টা করা হইত। রােদন জিনিসটা প্রহার-কারীর পক্ষে অত্যন্ত অপ্রিয় এবং অসুবিধাজনক এ-কথা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না।

 এখন এক-একবার ভাবি ভৃত্যদের হাত হইতে কেন এমন নির্মম ব্যবহার আমরা পাইতাম। মােটের উপরে আকার-প্রকারে আমরা যে স্নেহদয়ামায়ার অযােগ্য ছিলাম তাহা বলিতে পারি না। আসল কারণটা এই, ভৃত্যদের উপরে আমাদের সম্পূর্ণ ভার পড়িয়াছিল। সম্পূর্ণ ভার জিনিসটা বড় অসহ্য। পরমাত্মীয়ের পক্ষেও দুর্বহ। ছােটো ছেলেকে যদি ছোটো ছেলে হইতে দেওয়া যায়—সে যদি খেলিতে পায়, দৌড়িতে পায়, কৌতূহল মিটাইতে পারে তাহা হইলেই সে সহজ হয়। কিন্তু যদি মনে কর উহাকে বাহির হইতে দিব না, খেলায় বাধা দিব, ঠাণ্ডা করিয়া বসাইয়া রাখিব তাহা হইলে অত্যন্ত দুরূহ সমস্যার সৃষ্টি করা হয়। তাহা হইলে, ছেলেমানুষ ছেলেমানুষির দ্বারা নিজের যে-ভার নিজে