পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
জীবন-স্মৃতি

মহানন্দের বয়স আমার চেয়ে অনেক বেশি ছিল এবং এ চিঠিগুলি হিমাচলের শিখর পর্যন্ত পৌছে নাই।

 বহুকাল প্রবাসে থাকিয়া পিতা অল্প কয়েক দিনের জন্য যখন কলিকাতায় আসিতেন তখন তাহার প্রভাবে যেন সমস্ত বাড়ি ভরিয়া উঠিয়া গম গম করিতে থাকিত। দেখিতাম গুরুজনেরা গায়ে জোব্বা পরিয়া, সংযত পরিচ্ছন্ন হইয়া, মুখে পান থাকিলে তাহা বাহিরে ফেলিয়া দিয়া তাহার কাছে যাইতেন। সকলেই সাবধান হইয়া চলিতেন। রন্ধনের পাছে কোনাে ত্রুটি হয় এই জন্য মা নিজে রান্নাঘরে গিয়া বসিয়া থাকিতেন। বৃদ্ধ কিছু হরকরা তাহার তকমাওঅলা পাগড়ি ও শুভ্র চাপকান পরিয়া দ্বারে হাজির থাকিত। পাছে বারান্দায় গােলমাল দৌড়াদৌড়ি করিয়া তাহার বিরাম ভঙ্গ করি এজন্য পূর্বেই আমাদিগকে সতর্ক করিয়া দেওয়া হইয়াছে। আমরা ধীরে ধীরে চলি, ধীরে ধীরে বলি, উকি মারিতে আমাদের সাহস হয় না।

 একবার পিতা আসিলেন আমাদের তিন জনের উপনয়ন দিবার জন্য। বেদান্তবাগীশকে লইয়া তিনি বৈদিক মন্ত্র হইতে উপনয়নের অনুষ্ঠান নিজে সংকলন করিয়া লইলেন। অনেক দিন ধরিয়া দালানে বেচারামবাবু প্রতাই আমাদিগকে ব্রাহ্ম-ধর্মগ্রন্থে সংগৃহীত উপনিষদের মন্ত্রগুলি বিশুদ্ধরীতিতে বারংবার আবৃত্তি করাইয়া লইলেন। যথাসম্ভব প্রাচীন বৈদিক পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া আমাদের উপনয়ন হইল। মাথা মুড়াইয়া বীরবেইলি পরিয়া আমরা তিন বটু তোলার