পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিমালয় যাত্রা
৮৭

কাছে শুনিয়াছিলাম, বােলপুরের মাঠে চারিদিকেই ধান ফলিয়া আছে এবং সেখানে রাখালবালকদের সঙ্গে খেলা প্রতিদিনের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ধানখেত হইতে চাল সংগ্রহ করিয়া ভাত রাঁধিয়া রাখালদের সঙ্গে একত্রে বসিয়া খাওয়া এই খেলার একটা প্রধান অঙ্গ।

 ব্যাকুল হইয়া চারিদিকে চাহিলাম। হায় রে, মরু-প্রান্তরের মধ্যে কোথায় ধানের খেত। রাখালবালক হয়তো বা মাঠের কোথাও ছিল কিন্তু তাহাদিগকে বিশেষ করিয়া রাখালবালক বলিয়া চিনির কোনাে উপায় ছিল না। যাহা দেখিলাম না তাহার খেদ মিটিতে বিলম্ব হইল না।

 যাহা দেখিলাম তাহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট হইল। এখানে চাকরদের শাসন ছিল না। প্রান্তরলক্ষ্মী দিক্‌চক্রবালে একটিমাত্র নীল রেখার গণ্ডি আঁকিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাতে আমার অবাধসঞ্চরণের কোনাে ব্যাঘাত করিত না। যদিচ আমি নিতান্ত ছোটো ছিলাম কিন্তু পিতা কখনাে আমাকে যথেচ্ছবিহারে নিষেধ করিতেন না। বােলপুরের মাঠের মধ্যে স্থানে স্থানে বর্ষার জলধারায় বালিমাটি ক্ষয় করিয়া প্রারতল হইতে নিম্নে লাল কাকর ও নানা প্রকার পাথরে খচিত ছােটো ছােটো শৈলমালা, গুহা গহ্বর, নদী উপনদী রচনা করিয়া বালখিল্যদের দেশের ভূবৃত্তান্ত প্রকাশ করিয়াছে। এখানে এই ঢিবিওআলা খাদগুলিকে খােয়াই বলে। এখান হইতে জামার আঁচলে নানা প্রকারের পাথর সংগ্রহ করিয়া পিতার কাছে উপস্থিত করিতাম। তিনি আমার এই