পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
জীবন-স্মৃতি

অঙ্গটাই বাকি আছে। তাহার পরে যখন অত্যন্ত সহজে গাড়ি ছাড়িয়া দিল তখন কোথাও বিপদের একটুও আভাস না পাইয়া মনটা বিমর্ষ হইয়া গেল। গাড়ি ছুটিয়া চলিল; তরুশ্রেণীর সবুজ নীল পাড়দেওয়া বিস্তীর্ণ মাঠ এবং ছায়াচ্ছন্ন গ্রামগুলি রেলগাড়ির দুই ধারে দুই ছবির ঝরনার মতো বেগে ছুটিতে লাগিল, যেন মরীচিকার বন্যা বহিয়া চলিয়াছে। সন্ধ্যার সময় বােলপুরে পৌঁছিলাম। পালকিতে চড়িয়া চোখ বুঝিলাম। একেবারে কাল সকাল-বেলায় বােলপুরের সমস্ত বিস্ময় আমার জাগ্রত চোখের সম্মুখে খুলিয়া যাইবে এই আমার ইচ্ছা –সন্ধ্যার অস্পষ্টতার মধ্যে কিছু কিছু অভ্যাস যদি পাই তবে কালকের অখণ্ড আনন্দের রসভঙ্গ হইবে।

 ভোরে উঠিয়া বুক দুরু দুরু করিতে করিতে বাহিরে আসিয়া দাড়াইলাম। আমার পূর্ববর্তী ভ্রমণকারী আমাকে বলিয়াছিল পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের সঙ্গে বােলপুরের একটা বিষয়ে প্রভেদ এই ছিল যে, কুঠিবাড়ি হইতে রান্নাঘরে যাইবার পথে যদিও কোনো প্রকার অবরণ নাই তবু গায়ে রৌদ্র বৃষ্টি কিছুই লাগে না। অদ্ভুত রাস্তাটা খুজিতে বাহির হইলাম। পাঠকেরা, শুনিয়া আশ্চর্য হইবেন না যে আজ পর্যন্ত তাহা খুঁজিয়া পাই নাই।

 আমরা শহরের ছেলে, কোনাে কালে ধানের খেত দেখি নাই এবং রাখালবালকের কথা বইয়ে পড়িয়া তাহাদিগকে খুব মনােহর করিয়া কল্পনার পটে আঁকিয়াছিলাম। সত্যর