পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একদিন একটি খবর বেরল—জাপানী গবর্নমেণ্ট ইস্তেহার দিয়েছেন—“বহু জাতি তাঁদের প্রতি সহৃদয়তা প্রকাশ করে তাঁদের আহতদের সেবার জন্যে স্ব স্ব রেডক্রস-সেবকদের পাঠাবার অভিপ্রায় জানিয়েছেন। তাঁদের সকলকে জানান হচ্ছে তাঁদের সাহায্য প্রস্তাবের জন্য জাপান কৃতজ্ঞ, কিন্তু এস্থলে কোন বিদেশীয় সাহায্য গ্রহণে তাঁরা পরাঙ্মুখ।” জাপানের তীক্ষ্ণ রাজনীতি-বিচক্ষণতার ফলেই এইরূপ বিধান তাঁরা সাব্যস্ত করেছিলেন সন্দেহ নেই।

 দেখা যায় সেদিনকার জাপান ও আজকেকার জাপানের প্রতি ভারতবর্ষে আমাদের দৃষ্টিকোণের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেদিন তারা সবেমাত্র এক প্রচণ্ড বলশালী য়ুরোপীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করেছে…একমাত্র এসিয়াটিক জাতি তারা সমস্ত এসিয়ার মুখোজ্জ্বল করেছে এবং ‘Asia is one’ এই বাণীর দ্বারা সমগ্র এসিয়াকে জাগ্রত করেছে। আজ দেখি “এসিয়া এক” এই অভিনব বুলিটির ভিতর এক দারুন গুলী লুকিয়ে রেখেছিল যেটা সুযোগ মত বেরিয়ে পড়ে তামাম এসিয়াকে বিব্রত করে তুলবে, সেটি হচ্ছে ‘জাপানের অধীনতায়’। আজ কয়েক বৎসর ধরে চীন মহাদেশকে জাপানের ছত্রছায়ে আনবার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় সেটা পদে পদে প্রমাণিত হচ্ছে। শ্যাম, বর্মা, মলয়দ্বীপ, কোরিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ—কোথাও তাদের এ অভিসন্ধি আর লুকান নেই। পথিবীর পশ্চিম প্রান্তের ক্ষুদ্র দ্বীপ জাপানও যে সাম্রাজ্য বিস্তারের সমান অধিকারী এ বিষয়ে আর তাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। ইংলণ্ড যেমন ‘white man's burden’ বহন করার মহদুদ্দেশ্যে, কেবলমাত্র পরোপকারার্থ, দেশবিদেশে নিজেদের ‘ঝাণ্ডা উচা’ করছেন, জাপানও—ইংলণ্ডের দক্ষতম শিষ্যটিও—তদ্রুপ ‘yellow man's burden’ কাঁধে ওঠানর জন্যে, প্রতিবেশীদের অতিভার লাঘবের জন্যে, কেবলমাত্র তাদেরই কল্যাণের প্রতি দৃষ্টিবান হয়ে তাদের দিকে হস্তবিস্তার করছে। ইংলণ্ডের লৌহপাশ থেকে মুক্ত হয়ে জাপানের বজ্রকুসুমের বলয় পরতে কিসের আপত্তি? এ যে এসিয়াটিক স্যাকরার হাতে গড়া স্বদেশী জিনিস! কিন্তু ভবী ভোলবার নয়! নাড়া বেলতলায় দুবার যেতে নারাজ!

 যুদ্ধের পর অনেক জাপানীর সমাগম হতে থাকল ভারতবর্ষে ও আমাদের পরিবারমণ্ডলে। তার মধ্যে তিন-চারটির সঙ্গে আমাদের বিশেষ পরিচয় হল। তাদের মধ্যে দুটি ইয়োকোআনা ও হিষিদ্য চিত্রকর, তখনি নিজেদের দেশে কিছু কিছু নামকরা, পরে ভারতবর্ষ থেকে ফিরে গিয়ে

১৪৮