পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরদিন সে একরাশি এঁটেল মাটী ও চারি পাঁচখানি ধবধবে চিকুণ কাগজ আনিয়া আমাকে দেখাইল। সে বলিল— “এঁটেল মাটী হইতে আমি এই কাগজ প্ৰস্তুত করিয়াছি। এক টাকার ঐটেল মাটী হইতে দশ টাকার কাগজ হইবে। নয় টাকা লাভ থাকিবে। প্ৰথম প্ৰথম যাহা অল্প খরচ হইবে, তাহা যদি আপনি প্ৰদান করেন, তাহা হইলে আমরা এক স্বদেশী কোম্পানী খুলিব। লাভ অৰ্দ্ধেক আপনার অৰ্দ্ধেক আমার ।” এঁটেল মাটী ও কাগজ দেখিয়া আমি মনে মনে একটু হাসিলাম। স্বদেশী কোম্পানী সম্বন্ধে আমার একটু অভিজ্ঞতা আছে। ভাবিলাম যে, এ কাজ হালাগুলো বাঙ্গালীর উপযুক্ত বটে। তাহার প্রস্তাবে আমি সন্মত হইলাম । চারি পাঁচ দিন পরে আমরা দুইজনে কলিকাতা গমন করিলাম। ভালরূপ একটা স্বদেশী কোম্পানী খুলিতে হইলে দুই-চারিজন বড়লোকের নাম আবশ্যক। আমরা তাহার যোগাড় করিলাম। একটি মিটিং হইল। এঁটেল মাটী ও কাগজের নমুনা দেখিয়া বড়লোকেরা ঘোরতর আশ্চৰ্য্য হইলেন। তাঁহাদের মধ্যে কেবল একজন বলিলেন,- “এঁটেল মাটী দিয়া কাগজ প্ৰস্তুত হইতে পারে, তাহা আমি জানিতাম না। আমি মনে করিতাম যে, খড়িমাটি দিয়া কাগজ প্ৰস্তৃত হয়।” শঙ্কর ঘোষ উত্তর করিলেন, — “খড়িমাটী দিয়া হইতে পারে, কিন্তু তাহাতে খরচ অধিক পড়ে।” কাগজ সম্বন্ধে ইহার এইরূপ গভীর জ্ঞান দেখিয়া সকলে তাহার প্রশংসা করিতে লাগিলেন । (G) সেই যাহারা ইংরেজীতে বক্তৃতা করেন, য কৃতা শুনিয়া স্কুল-কলেজের ছোড়াগুলো আনন্দে হাততালি দিয়া গগন ফাটাইয়া দেয়... আমরা সেইরূপ দুইজন বক্তার যোগাড় করিয়াছিলাম। তাঁহারা ইজের দিয়া কেন্সর আঁটিয়া রাখেন। তাঁহাদের একজন বক্তৃতা করিলেন— S. আমাদের কোম্পানীর নাম হইল,— “গ্র্যাণ্ড স্বদেশী কোম্পানী লিমিটেড।” কয়েকজন বড়লোক ও উগ্ৰ বক্তা ডাইরেক্টর বা পরিচালক হইলেন। কারণ, এই সকল বড়লোক ও বক্তারা সকল প্রকার কারুকাৰ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্বন্ধে ধুরন্ধর। ইহারা না জানেন, এমন বিষয় নাই। শঙ্কর ঘোষ ইংরাজী ও বাঙ্গালায় কোম্পানীর বিবরণ প্ৰদান করিয়া কাগজ ছাপাইলেন ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্ৰকাশ করিলেন। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল যে, যে ব্যক্তি একশত টাকার শেয়ার বা অংশ কিনিবে, প্রতিমাসে লাভম্বরূপ তাহাকে পঁচিশ টাকা প্ৰদান করা হইবে। দেশে ধন্য ধন্য পড়িয়া গেল। সকলে বলিতে লাগিল যে, আর আমাদের ভাবনা নাই। যখন এঁটেল মাটী হইতে কাগজ প্ৰস্তুত হইবে, তখন বালি হইতে কাপড় হইবে। বিদেশ হইতে কোন দ্রব্য আর আমাদিগকে আমদানি করিতে হইবে না। দেশ টাকায় পূর্ণ হইয়া যাইবে। এই কথা বলিয়া কলিকাতায় বাঙ্গালীরা একদিন সন্ধ্যাবেলা আপন আপন ঘর আলোকমালায় আলোকিত করিল। প্রথম প্রথম শত শত লোক শেয়ার কিনিতে লাগিল। হুড় হুড় করিয়া টাকা আসিতে লাগিল। আমি কোষাধ্যক্ষ ছিলাম। টাকা সব আমার কাছে আসিতে লাগিল। কয়েক মাস। গত হইয়া গেল। এঁটেল মাটী দিয়া শঙ্কর ঘোষ একখানি কাগজ প্রস্তুত করিলেন না। মাসে যে পঁচিশ টাকা লাভ দিবার কথা ছিল, তাহার একটি পয়সাও কেহ পাইল r8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comশ্মির্ত্য","র্শী ******