পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেটা ১৮৭০ সালের কথা। এই কাজে থাকতে তিনি Bengali District Gazetters, Statistical Account of Bengal এবং Bengal Manuscript Records সম্পাদনায় সাহায্য করেন। ১৮৭৫-এ হাণ্টার বিলাতে গেলে ত্রৈলোক্যনাথকেও সঙ্গে নিতে চান, কিন্তু নিকটজনদের আপত্তির ফলে তিনি সমুদ্রযাত্রা করতে পারেন নি।

 ১৮৭৫ থেকে ১৮৮১ পর্যন্ত ত্রৈলোক্যনাথ উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও অযোধ্যায় কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগে প্রথমে হেড ক্লার্ক, পরে হেড সুপারিনটেনডেণ্ট এবং শেষে পরিচালক স্যার এডওয়ার্ড বকের ব্যক্তিগত সহকারীরূপে কাজ করেন। এখানে থাকতে তিনি স্থানীয় শিল্পবিস্তারে সাহায্য করেন। বড়ো হোটেলে ও রেলওয়ে স্টেশনে শিল্পদ্রব্য বিক্রি হওয়ার যে-ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাই, ত্রৈলোক্যনাথই তার প্রবর্তক। এখানেও দুর্ভিক্ষের সময়ে গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে তিনি সরকারকে অবহিত করেন এবং সরকারি প্রয়াসে গাজরের চাষ উদবুদ্ধ করে বহু মানুষের প্রাণরক্ষা করা সম্ভবপর হয়।

 ত্রৈলোক্যনাথের পরবতী কর্ম ভারত সরকারের রাজস্ব ও কৃষি বিভাগে—এখানেও তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে ক্রমশ পদোন্নতি লাভ করেন। ভারতের শিল্পদ্রব্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি A Rough List of Indian Art Manufactures নামে একটি বর্ণনামূলক পুস্তিকা লিখে (১৮৮১-৮২) সকলকে চমৎকৃত করেন। অনেকে বলেন যে, ইউরোপ ও আমেরিকায় ভারতীয় শিল্পদ্রব্যের চাহিদা সৃষ্টিতে এই পুস্তিকার ভূমিকাই ছিল প্রধান। ১৮৮২তে আমস্টার্ডামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্যে তিনি ভারতীয় উৎপন্নদ্রব্যের একটি বর্ণনামূলক তালিকা তৈরি করেন। এবারেও তাঁর আমন্ত্রণ ছিল হল্যাণ্ডে যাওয়ার, কিন্তু আত্মীয়স্বজনের প্রতিকূলতায় তাঁর বিদেশ যাওয়া হয় নি। তবে ১৮৮৬ সালে অনুরূপ বাধা অগ্রাহ্য করে তিনি ব্রিটেনে যান এবং সেখান থেকে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন। কিছুকাল পরে তিনি আবার ইউরোপে যান, কিন্তু ফিরে এসে যথাবিধি প্রায়শ্চিত্ত করেন। কয়েক বৎসরের মধ্যে তাঁর A List of Indian Economic Products (১৮৮৮), A Descriptive Catalogue of Indian Products (১৮৮৮), A Handbook of Indian Products (১৮৮৮) এবং ভ্রমণকাহিনী A Visit to Europe (১৮৮৮) প্রকাশিত হয়।

 এরপর রাজস্ববিভাগের কর্ম পরিত্যাগ করে তিনি কলকাতায় ইণ্ডিয়ান মিউজিয়মের অ্যাসিস্ট্যাণ্ট কিপারের পদগ্রহণ করেন। এ-সময়েই তার, বাংলা সাহিত্যসাধনার সূচনা হয়। স্বশিক্ষিত ত্রৈলোক্যনাথ বাংলা, ওড়িয়া, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষায় যেমন পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন, তেমনি ভূতত্ত্ব, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, নৃতত্ত্ব, উদ্ভিদবিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞানবিজ্ঞানের নানা শাখায় অধিকার লাভ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে অসুস্থতাবশত তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসরগ্রহণের পর তিনি সাহিত্যচর্চায় অধিকতর মনোযোগ দিতে সমর্থ