পাতা:দর্পণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরেশ্বরের সঙ্গেও আলাপ করবে ! মাঝখানে বহুদিন কেটে গেলেও এই স্বাধীনচেতা এবং চাষীর পক্ষে আশ্চৰ্য্য রকম সংস্কার-মুক্ত খাপছাড়া লোকটিকে সে ভোলে নি । পরিচয় হবার পর প্রথমে ভেবেছিল ঝুমুরিয়ায় একটি কেন্দ্ৰ স্থাপন করে বীরেশ্বরকে ভার দেবে। বীরেশ্বরের মেজাজ আন্দাজ করার পর কৃষ্ণেন্দুর ভরসা হয় নি। আত্মকেন্দ্ৰিক আদর্শবাদী লোক দিযেও কাজ চলে। কিন্তু তীব্ৰ অভিমানের তাপে এত বেশী মাথা গরম হলে বিপদ ভয় । বীরেশ্বরকে কৃষ্ণেন্দু কাজে লাগাতে পারেনি, কিন্তু ভুলতেও পারেনি । তাকে । কৃষ্ণেন্দু আলাপ করতে জানে চমৎকার। অচেনা লোকের সঙ্গে অল্প সময়ে সে ভাবি জমাতে পারে । নানা আবেষ্টনীর নানা ধাচের মানুষের বিচিত্ৰ মন ও আচরণের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার অভিজ্ঞতায় তার অকারণ সমালোচনার আদিম প্ৰবৃত্তি এত বেশী চাপা পড়ে গিয়েছে যে তার কথা ও ব্যবহার মানুষের মধ্যে অমিল বা বিরোধিতার অনুভূতি জাগায় না। অসহায় অসুস্থ জরাজীর্ণ ও দুর্বল হৃদয়মনের অসংখ্য বিকার আর ছদ্মবেশ প্ৰথম বয়সে মানুষ জাতটার উপরে কষ্ণেন্দুর অশ্রদ্ধা জন্মিয়ে দিয়েছিল। তারপর ক্ৰমে ক্ৰমে জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ হবার দাওয়াই পেয়ে সেই আবেগজরের উপশম হয়েছে এবং সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত মানুষের সম্পর্কে খানিকটা নির্বিবকার ও প্ৰায় নিবিচার বন্ধুত্ব“বোধ। কোন মানুষকেই সে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধাও করে না, তুচ্ছ ও ভাবে না । একক ও সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে মানুষের কাজ ও অকাজ করার বিস্ময়কর প্রচ্ছন্ন প্রেরণা মোটামুটি অনুমান করতে শিখে মানুষ সম্বন্ধে বিস্ময়বোধ তার কমে গিয়েছে । ভুল বোঝা আর অর্থহীন অকারণ ছেলেমানুষী অভিমানের জন্য রামপালকে সে একটু তিরস্কার করল, কিন্তু এত পরিষ্কার করে তার ভুলটা VS2 O