পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গৃহান্তর
১৭১

দিল্লীশ্বরের অধিকার লোপ হইবে। ইতিপূর্ব্বেও ত আক্‌বর শাহা উৎকল জয় করিয়াছিলেন, কিন্তু কতদিন তথাকার করগ্রাহী ছিলেন? এবারও জয় করিলে, এবারও তাহা ঘটিবে। না হয় আবার সৈন্য প্রেরণ করিবেন; আবার উৎকল জয় করুন, আবার পাঠান স্বাধীন হইবে। পাঠানেরা বাঙ্গালী নহে; কখনও অধীনতা স্বীকার করে নাই; একজন মাত্র জীবিত থাকিতে কখনও করিবেও না; ইহা নিশ্চিত কহিলাম। তবে আর রাজপুত-পাঠানের শোণিতে পৃথিবী প্লাবিত করিয়া কাজ কি?”

 জগৎসিংহ কহিলেন, “আপনি কিরূপ করিতে বলেন?” ওস্‌মান কহিলেন, “আমি কিছুই বলিতেছি না। আমার প্রভু সন্ধি করিতে বলেন।”

 জ। কিরূপ সন্ধি?”

 ও। উভয় পক্ষেই কিঞ্চিৎ লাঘব স্বীকার করুন। নবাব কতলু খাঁ বাহুবলে বঙ্গদেশের যে অংশ জয় করিয়াছেন, তাহা ত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছেন। আকবর শাহাও উড়িষ্যার স্বত্ব ত্যাগ করিয়া সৈন্য লইয়া যাউন, আর ভবিষ্যতে আক্রমণ করিতে ক্ষান্ত থাকুন। ইহাতে বাদশাহের কোন ক্ষতি নাই; বরং পাঠানের ক্ষতি। আমরা যাহা ক্লেশে হস্তগত করিয়াছি, তাহা ত্যাগ করিতেছি; আকবর শাহা যাহা হস্তগত করিতে পারেন নাই, তাহাই ত্যাগ করিতেছেন।

 রাজকুমার শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “উত্তম কথা; কিন্তু এ সকল প্রস্তাব আমার নিকট কেন? সন্ধিবিগ্রহের কর্ত্তা মহারাজ মানসিংহ; তাঁহার নিকট দূত প্রেরণ করুন।”

 ওস্‌মান কহিলেন, “মহারাজের নিকট দূত প্রেরণ করা হইয়াছিল; দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁহার নিকট কে রটনা করিয়াছে যে, পাঠানেরা