পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

ঘাটের সোপানের উপর বসিয়া —একটী মর্ম্মভেদী দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল—“হায়! কেন এমন হয়?”

 চঞ্চল তরঙ্গময়ী যমুনা, কল কল-ছল-ছল শব্দে—উজান তুলিয়া চলিয়াছে। নীল জলের উপর, গলিত রৌপ্যের মত চন্দ্রকিরণ ধারা। স্নিগ্ধ মলয়—যমুনার শীকরকণা অপহরণ করিয়া আনিয়া, তাহাকে মৃতব্যজন করিতে লাগিল। কিন্তু কই তাহাতেও ত তাহার হৃদয়ের উষ্মা যাইতেছে না।

 সে যেন শুনিল—যমুনার কলকল ছলছল শব্দ তাহাকে বলিতেছে, “ছিঃ— ছিঃ—এত লঘু তুমি?” সেই নৈশসমীরণ মৃদু গর্জ্জনে বলিতেছে—“ছিঃ―ছিঃ এত অসার তুমি!” সেই শুভ্র জ্যোৎস্না যেন বিদ্রূপ করিয়া বলিতেছে —“নিজের স্বার্থই কি তোমার এত বেশী! যাহাকে তুমি ভালবাস—তাহার স্বার্থ দেখিতে কি তুমি একাবারে অন্ধ। চলিয়া যাও লতিফ্! সুদুর প্রবাসে। আর এখানে থাকিও না। যাহাকে ভালবাস, তাহার সুখের পথ কণ্টকিত করিও না।”

 নীরবভাষায় জড় প্রকৃতির এই শ্লেষময় তীব্র তিরষ্কার, যেন তাহার প্রাণের মধ্যে একটা অতি শোচনীয় লজ্জাআনিয়। দিল। মীর লতিফ অস্ফুট স্বরে বলিল—এই ভাষাহীনা প্রকৃতি দেবী ঈঙ্গিতে আমাকে যে সঙ্কেত করিতেছেন, তাহাই ত ঠিক। জুম্মাশা ত আমাকে আভাসে ঈঙ্গিতে এই কথাই বলিয়াছিলেন।

 তারপর সে মনে মনে নিম্নলিখিত ভাবে, প্রশ্নোত্তর ছলে এই যন্ত্রণাময় ব্যাপারটা লইয়া একটু আলোচনা আরম্ভ করিল।

৮৭