পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পরিচয়

যায় যে, মনে হয় যেন বহু যত্নে সে আমার কথাটা বুঝিবার চেষ্টা করিতেছে— কিন্তু হঠাৎ আবিষ্কার করা যায় যে, বহু পূর্বেই সে আমার কথাটা ঠিক বুঝিয়া লইয়াছে।

 আমি কহিলাম, সেই বটে।’

 দীপ্তি কহিল, ‘তাহাতে ক্ষতি কী।’

 আমি কহিলাম, যে ভূক্তভোগী সেই জানে। যে লোক সাহিত্যব্যবসায়ী সে আমার কথা বুঝিবে। সাহিত্যব্যবসায়ীকে নিজের অন্তরের মধ্য হইতে নানা ভাব এবং নানা চরিত্র বাহির করিতে হয়। যেমন ভালো মালী ফরমাশ অনুসারে নানারূপ সংঘটন এবং বিশেষরূপ চাষের দ্বারা একজাতীয় ফুল হইতে নানাপ্রকার ফুল বাহির করে— কোনোটার বা পাতা বডো, কোনোটার বা রঙ বিচিত্র, কোনোটার বা গন্ধ সুন্দর, কোনোটার বা ফল সুমিষ্ট। তেমনি সাহিত্যব্যবসায়ী আপনার একটি মন হইতে নানাবিধ ফলন বাহির করে। মনের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ভাবের উপর কল্পনার উত্তাপ প্রয়োগ করিয়া তাহাদের প্রত্যেককে স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ আকারে প্রকাশ করে। যে সকল ভাব, যে সকল স্মৃতি, মনোবৃত্তির যে সকল উচ্ছ্বাস সাধারণ লোকের মনে আপন আপন যথানির্দিষ্ট কাজ করিয়া যথাকালে ঝরিয়া পড়ে অথবা রূপান্তরিত হইয়া যায়, সাহিত্যব্যবসায়ী সেগুলিকে ভিন্ন করিয়া লইয়া তাহাদিগকে স্থায়ী ভাবে রূপবান করিয়া তোলে। যখনি তাহাদিগকে ভালোরূপে মূর্তিমান করিয়া প্রকাশ করে তখনি তাহারা অমর হইয়া উঠে। এমনি করিয়া ক্রমশ সাহিত্যব্যবসায়ীর মনে এক দল স্ব-স্ব-প্রধান লোকের পল্লী বসিয়া যায়। তাহার জীবনের একটা ঐক্য থাকে না। সে দেখিতে দেখিতে একেবারে শতধা হইয়া পড়ে। তাহার চিরজীবনপ্রাপ্ত ক্ষুধিত মনোভাবের দলগুলি বিশ্বজগতের সর্বত্র আপন হস্ত প্রসারণ করিতে থাকে। সকল বিষয়েই তাহাদের