পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমার শুধু দুঃখ এই যে, চৌদ্দমাস কাল অনেকটা হেলায় কাটিয়েছি। হয়তো বাঙ্গলার জেলে থাকলে এই সময়ের মধ্যে সাধনার পথে অনেকটা এগুতে পারতুম। কিন্তু তা হ’বার নয়! এখন আমার প্রার্থনা শুধু এই, “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।” যখন খালাসের কল্পনা করি তখন আনন্দ যত হয়, তার চেয়ে বেশী হয় ভয়। ভয় হয় পাছে প্রস্তুত হতে না হতে কর্ত্তব্যের আহ্বান এসে পৌঁছায়। তখন মনে হয়, প্রস্তুত না হওয়া পর্য্যন্ত যেন খালাসের কথা না উঠে। আজ আমি অন্তরে বাহিরে প্রস্তুত নই, তাই কর্ত্তব্যের আহ্বান এসে পৌঁছায় নাই। যেদিন প্রস্তুত হব সেদিন এক মুহুর্ত্তের জন্যও আমাকে কেহ আট্‌কে রাখতে পারবেনা। এসব ভাবের কথা; এর মধ্য objective truth আছে কিনা জানি না। জেলখানায় থাকতে থাকতে subjective truth এবং objective truth এক হয়ে যায়। ভাব ও স্মৃতি যেন সত্যে পরিণত হয়ে পড়ে। আমার অবস্থা অনেকট তাই। আপাততঃ ভাবই আমার কাছে বাস্তব সত্য; কারণ একত্ববাধের মধ্যেই শান্তি।

 আপনি লিখেছেন, “দেশের ও কালের ব্যাবধান আপনাকে বাঙ্গলা দেশের নিকট আরও প্রিয় করিয়া তুলিয়াছে।” কিন্তু দেশের ও কালের ব্যবধান সোনার বাঙ্গলাকে আমার কাছে কত সুন্দর, কত সত্য করে তুলেছে ত আমি বলতে পারি না। ৺দেশবন্ধু তাঁর বাঙ্গলার গীতি কবিতায় বলেছেন, “বাঙ্গলার জল, বাঙ্গলার মাটির মধ্যে একটা চিরন্তন সত্য নিহিত আছে।” এ উক্তির সত্যতা কি এমন ভাবে বুঝতে পারতুম, যদি এখানে এক বৎসর না থাকতুম? “বাঙ্গলার ঢেউ-খেলানো শ্যামল শস্যক্ষেত্র, মধু গন্ধ-বহ মুকুলিত আম্রকানন, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনা জ্বালা সন্ধ্যার আরতি, গ্রামে গ্রামে ছবির মত কুটির প্রাঙ্গণ”—এসব দৃশ্য কল্পনার মধ্য দিয়াও কত সুন্দর!

২৬০